নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেখতে দেখতে পবিত্র রমজান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিচ্ছে। আমরা এসে পৌঁছেছি শেষ দশকের দ্বারপ্রান্তে। রমজানের শেষ দশকে নবী (সা.)স্ত্রী-পরিবারসহ সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক প্রবেশ করলে রাসূল (সা.)কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে সারা রাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।’ রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে যত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য সময় তেমন করতেন না।
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না।’
শবে কদর
শবে কদরে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
‘আমি একে (কুরআন)অবতীর্ণ করেছি শবে কদরে।’ (সূরা কাদর: ১)।
শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম
আল্লাহ বলেন: ‘শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’(সূরা কাদর: ৩)।
বরকতময় রাত
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবতীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।’ (সূরা দুখান: ৩)।
শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করলে আগের সকল ছোট গুনাহ মোচন হয়ে যায়।
রাসূল (সা.)বলেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার আগের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।’
শবে কদর কখন হবে?
শবে কদর হবে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে।
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.)বলেছেন: ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।’
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.)বলেন: ‘স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।’
কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, দু ব্যক্তির বিবাদের কারণে রাসূল (সা.)তা ভুলে গেছেন।
আমাদের দেশে সাধারণত: মানুষ শুধু রমজানের সাতাশ তারিখে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করে এবং ধারণা করে এ রাতেই শবে কদর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ ধারণা, সুন্নতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.)বলেন: ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর।’
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.)বলেন: ‘স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।’
তবে শেষ সাত দিনের বেজোড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, কয়েকজন সাহাবী রমজানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত শবে কদর হতে দেখেছেন। সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী (সা.)বলেন: ‘আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অত:এব কেউ চাইলে শেষ সাত রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পারে।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
কোনো কোনো সালাফে-সালেহীন সাতাশ রাত শবে কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন।
সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা:), উবাই ইবনে কা’ব (রা:) এর মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়।
কিন্তু নবী (সা.)থেকে এভাবে নির্দিষ্ট করে লাইলাতুল কদর হওয়ার কোনো হাদিস নাই। তাই উপরোক্ত সাহাবীদের কথার উপর ভিত্তি করে বড় জোড় সাতাশের রাতে শবে কদর হওয়াকে অধিক সম্ভাবনাময় বলা যেতে পারে।
তবে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সঠিক কথা হল, শবে কদর কখনো ২১, কখনো ২৩, কখনো ২৫, কখনো ২৭ আবার কখনো ২৯ রাতে হতে পারে।
সুতরাং শুধু সাতাশ তারিখ নয়, বরং কেউ যদি রমজানের শেষ দশকের উপরোক্ত চটি রাত জাগ্রত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে কদর পাবে। কিন্তু শুধু সাতাশ রাত জাগলে শবে কদর পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই।
শবে কদরের বিশেষ দুয়া
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বল: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অত:এব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিযী, অনুচ্ছেদ, কোন দুয়াটি শ্রেষ্ঠ। তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ)।
ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত:
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। আল্লাহ তায়ালা নবী (সা.)কে মৃত্যু দেয়া পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।’(সহীহ বুখারী)।
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) প্রতি রমজানের দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেন নি। তাই যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন।
ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদত। যেকোনো মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোনো কথা শরীয়তে নেই।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ