স্বাস্থ্য ডেস্ক:
অনেক সময় বসে বা শুয়ে থাকা অবস্থায় পায়ের রগে বা পেশীতে টান খায়। এটা দাঁড়ালেও হয়। অনেক সময় পা ভাঁজ করে রাখার পর হঠাৎ করে সোজা করলেও পেশীতে টান লেগে যায়। এটা ঘুমের মাঝে বা জেগে থেকেও হতে পারে। আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হঠাৎ কোনো পেশী সংকুচিত হয়ে গেলে পেশীতে খিঁচুনি তৈরি হয়। বিভিন্ন কারণেই পেশীর খিঁচুনি হতে পারে।
পিঠে ডিস্ক সমস্যা হলে:
পিঠের খিঁচুনি খুব অস্বস্তিকর এবং নির্ণয়ে কঠিন হতে পারে। ‘খিঁচুনি তিনদিনের বেশি থাকে এবং কাশি বা হাঁচির দেয়ার সময় যদি খুব বেদনাদায়ক হতে পারে বা অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। পিঠে ডিস্ক সমস্যার কারণে হয়তো এমনটা হতে পারে।’
ধমনী সমস্যা থাকলে: ধমনীতে প্লেক সৃষ্টি হলে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ পায়ে হয়ে থাকে। এ রোগে আপনি ব্যথা বা অবশতা অনুভব করতে পারেন অথবা পায়ের আঙুলের লোম অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। পায়ের খিঁচুনি হলে হাঁটা শুরু করলে পেশী সংকোচনগত ব্যথা শুরু হয়। এটি পেশীতে নিজস্ব রক্ত সরবরাহে দ্রুত প্রতিবন্ধকতার লক্ষণ এবং এ প্রতিবন্ধকতা হয় রক্ত সরবরাহ পথে রেড ফ্ল্যাগ থাকার কারণে।
অতিরিক্ত ক্লান্ত হলে:
আপনি কি জানেন আপনি কিভাবে মাঝেমাঝে বিরক্তিকর চোখের খিঁচুনির সম্মুখীন হন? চোখের খিঁচুনি হলে আপনার চোখের পাতার উঠানামা বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি বিরক্তিকর বা ঝামেলাপূর্ণ হয় না এবং মাঝেমাঝে চোখে খিঁচুনি হওয়াটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ঘটনা। আপনার মতোই চিকিৎসকদের পক্ষে এ রোগের কারণ নির্ণয় কঠিন হতে পারে। কারণ ‘এর কারণ নির্ণয়ের জন্য ভালো কোনো উপায় নেই। ক্লান্তি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন অথবা চোখে বা চোখের আশেপাশে জ্বালাতনের কারণে এটি হতে পারে।’
তির্যকভাবে ঘুমানোর কারণে:
আপনি যদি কৌণিক বা তির্যকভাবে ঘুমান এবং এ সময় একেবারেই নড়াচড়া না করেন তাহলে খিঁচুনি হতে পারে। আপনার পিঠে বিভিন্ন দিকে যাওয়া একটি বৃহৎ পেশী পুঞ্জ রয়েছে। আপনি যদি ঘাড় বাঁকা করে ঘুমান তাহলে ওই পেশীর যেকোনো সরু তন্তুতে আঘাত লাগতে পারে। এরকম ঘটলে ওই পেশীকে রক্ষার জন্য আশেপাশের পেশীসমূহে খিঁচুনি হয়। বিপজ্জনক না হলেও এটি আপনার শ্বাসক্রিয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে টাইপ করলে:
আপনি হয়তো সারাদিন কম্পিউটারে টাইপ করেন। এক্ষেত্রে আপনার পেশীর খিঁচুনি হতে পারে। এরকম পুনরাবৃত্তিমূলক গতি উপরস্থিত পিঠের রম্বয়েড পেশীকে ক্লান্ত করে এবং এর ফলে পেশীর খিঁচুনি হতে পারে। এর জন্য কোনো ছোট কাপে ১.৫ ইঞ্চি সমান পানি নিয়ে রেফ্রিজারেটরে রেখে বরফ বানিয়ে নিন, তারপর কাপ থেকে বরফ আলাদা করে খিঁচুনির জায়গায় ম্যাসাজ করুন। এতে আরাম পাবেন।
পুষ্টির অভাব থাকলে:
আপনার ইলেক্ট্রোলাইট (ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম) পেশীর সংকোচনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ব্যাহত হলে পেশীতে আকস্মিক টান বা ঝাঁকি, ব্যথা এবং দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এসব উপাদানের ঘাটতি মেটাবে।
ডিহাইড্রেটেড হলে:
শুষ্ক বা ডিহাইড্রেটেড থাকলে খিঁচুনি হতে পারে। পরিমিত মাত্রায় হাইড্রেটেড থাকলে খিঁচুনিমুক্ত থাকা যায়। শরীরে পানির মাত্রা কমে গেলে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়। এটি অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে বেশি হয় যখন তারা গরম আবহাওয়ায় দীর্ঘ এবং কঠোর পরিশ্রম করেন। tai অনুশীলন করার সময় ১০ থেকে ২০ মিনিট পরপর ৭ থেকে ১০ আউন্স তরল পানের পরামর্শ দেন। কিন্তু আপনি যদি গরমে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটেরও বেশি অতি পরিশ্রমের কাজকর্ম করেন তাহলে স্পোর্টস ড্রিংক পানে হারানো ইলেক্ট্রোলাইট পুষিয়ে নিন।
সন্তানসম্ভবা মায়েদের:
আপনি সন্তানসম্ভবা হলে অনেক আশ্চর্য বিষয়ের সম্মুখীন হতে পারেন। তার মাঝে একটি হচ্ছে পায়ের গোড়ালিতে খিঁচুনি। পেশী টানের জন্য অনেক সময় পায়ের পাতা বাঁকা হয়ে যায়। এ সময় বাঁকা হয়ে যা যাওয়া গোড়ালি প্রসারিত (ডানে বায়ে, ওপর নিচ ঘোরালে)করলে পেশী সংকোচন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ