মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুই মাস পর দুই ঘন্টার জন্য স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করাতে কারাগার থেকে বের করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য-পরীক্ষা শেষে আবারও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় এবং বর্তমানে পরিত্যাক্ত কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আগে থেকেই সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল হাসপাতাল ও নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনীর কর্তৃপক্ষ। হুইলচেয়ারও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল তাঁর জন্য, কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই লিফটে উঠেন। এরপর তাকে ৫১২ নম্বর কেবিনে নেয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রথম ধাপে বেগম খালেদা জিয়ার রক্ত সংগ্রহ করে তাঁকে রেডিওলজি ইমেজিং বিভাগে নেয়া হয়। হাসপাতালে তাঁর পছন্দের এবং কারা কর্তৃপক্ষের একজনসহ মোট পাঁচ চিকিৎসকের অধীনে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ডাক্তাররা হলেন (বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের) ডা. ফয়জুর রহমান, ডা. এম আলী, ডা. ওয়াহেদুজ্জামান ও ডা. এফ এম সিদ্দিকী এবং কারা কর্তৃপক্ষের ছিলেন কারা অধিদপ্তরের চিকিৎসক ডা. শুভ।
কড়া নিরাপত্তায় বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনীর বহরে ছিল আটটি গাড়ি ও ছয়টি মোটরসাইকেল। বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য-পরীক্ষা ঘিরে হাসপাতালেও নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়(বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে এনে দুপুর পৌনে ২টায় আবার তাঁকে কারাগারে নেয়া হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদন্ড হওয়ায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখান থেকে দুই মাস পর বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে আনা হলো।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন যাবৎ আর্থ্রাইটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। গত কয়েক দিন ধরে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই বোর্ড রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার উদ্যোগ নেয় সরকার। চিকিৎসকদের পরামর্শেই তাঁকে বিএসএমএমইউ’তে নেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে।
জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি হাসপাতালের কেবিন ব্লকের সামনে গিয়ে থামে। কিছুক্ষণ পর বেগম খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নামেন। আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো একটি হুইল চেয়ার। বেগম খালেদা জিয়া সেটি ব্যবহার না করে কেবিন ব্লকের লিফটের দিকে এগিয়ে যান।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ-আল হারুন তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
লিফটে করে কেবিন ব্লকের পঞ্চম তলার ৫১২ নাম্বার কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। সেখানেও আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো কেবিনটি।
বিএসএমএমইউ এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন জানিয়েছেন, আপাতদৃষ্টিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভালো আছেন।
তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই তাঁর জন্য হাসপাতালের ৫১২ নাম্বার কেবিনটি প্রস্তুত রেখেছিলাম। সেখানে তিনি অবস্থান করেন এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসক এবং বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি অসুস্থ, কিন্তু তাঁকে হাঁটিয়ে আনা হয়েছে এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আগে থেকেই হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য হুইল চেয়ার প্রস্তুত রাখা ছিল, কিন্তু তিনি নিজে আমাকে বলেছেন- ‘আমি হেঁটেই যেতে পারব। আমার হুইল চেয়ারের দরকার নেই’। উনি নিজেই এটা আমাকে বলেছেন। তিনি হেঁটেই লিফটে উঠে হাসপাতালের নির্ধারিত কেবিনে প্রবেশ করেন।
পরিচালক বলেন, সেক্ষেত্রে তাঁকে একেবারে অসুস্থ বলার সুযোগ নেই। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডই বিষয়টি ভালো বলতে পারবে।
আমরা শুরু থেকেই উনার জন্য সমস্ত কিছু প্রস্তুত রেখেছিলাম। ৫১২ নাম্বার কেবিন প্রস্তুত ছিল। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর রেডিওলজি বিভাগে যান।
‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য যে প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা করা হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়’ সাংবাদিকরা এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড বলেছিল আমাদের এখানে এক্সরে করে দিতে আমরা সেটি করে দিয়েছি। উনার পছন্দের চিকিৎসরা ছিলেন। তারা আমাদের যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন সেভাবে আমার এক্সরেগুলো করে দিয়েছি।
পরিচালক জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন, ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. ওয়াহেদুর রহমান ও কারা অধিদপ্তরের চিকিৎসক ডা. শুভ উপস্থিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের উপস্থিতে যেন তাঁর এক্স-রে করা হয়। সে কারণে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের উপস্থিতিতেই বেগম খালেদা জিয়ার হাড়ের বিভিন্ন অংশের এক্স-রে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি রোববার (৮ এপ্রিল) রিপোর্টগুলো পাওয়া যাবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএসএমএমইউর পরিচালক বলেন, রিপোর্ট পাওয়ার পর এগুলো কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কারা কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেডিকেল টিমের কাছে পৌঁছে দেবেন।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর