২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৩১

বই বিকিকিনি নয়, ভালোবাসায় মেতেছিল বইমেলা

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইলা ফারজানার সঙ্গে। তিনি  বলেন, ‘আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্তের প্রথম দিন। সব মিলিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সময় কাটাতে চলে এসেছি। বাড়ি ফেরার পথে দুই একটি বই কিনে ফিরবো।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সায়মা আক্তার বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে বিশেষ দিনে ঘুরবার সুযোগ মিলে না। সারা দিন অফিস করে মাত্র ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে মেলায় আসলাম। তার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরবো।.

সরেজমিনে দেখা গেছে, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী অংশে যেন বসেছিল যুগলদের হাট। মেয়েদের অনেকের পরনে ছিলো হলুদ রঙের শাড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা। আর ছেলেদের পাঞ্জাবি। বেশিরভাগকেই দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গনের বিভিন্ন স্থানে বসে আড্ডা দিতে। বইয়ের স্টলগুলোতে তাদের উঁকিঝুকি ছিল কম।

প্রকাশকরা বলছেন, উৎসবপ্রিয় বাঙালি জাতি উৎসবে মেতে ছিল। উৎসবের এই দিনটিতে অঢেল মানুষের ঢল নামলেও বই কেনায় আগ্রহ ছিল কম। হয়তো সামনের দিনগুলোতে বই কিনবেন তারা। আবার অনেক প্রকাশক বলছেন, বই কিনুক আর নাই কিনুক, বইয়ের সঙ্গে থেকে তারা মেলাকে জমজমাট রেখেছে। এটাই অনেক বড় কিছু।

সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ  বলেন, ‘এটা হচ্ছে মেলার তৃতীয় শুক্রবার। কিন্তু এই একই দিনে রয়েছে তিনটি বিশেষ দিন। ফলে যে বিক্রি তিনগুণ বেড়ে গেছে, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। কিন্তু মানুষ বেড়েছে। এবার বইমেলার পরিসর বড় হওয়াতে মানুষের ভিড়টা ধারণ করতে পারছে। বিক্রি ভালো বলা যায়, তবে তিনগুণ বেশি হওয়ার মতো কিছু হয়নি।’

নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক জুয়েল রেদওয়ানুল বলেন, ‘শুক্রবারকে আমরা বোনাস হিসেবে পাই। কিন্তু আজকে শুক্রবারে ভালোবাসা দিবস এবং ফাগুনের প্রথম দিন পড়ে গেছে। যার ফলে মানুষের ভিড় হয়েছে, কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। বেশিরভাগ মানুষই ঘুরতে এসেছে। মেলাটা জমবে একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে।’.

প্রথমা প্রকাশনী ডেপুটি ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘মেলায় যত লোক আছে, সে হিসাবে বিক্রি হয়নি। বেশিরভাগই দর্শনার্থী। আজ পহেলা ফাল্গুন আবার ভ্যালেন্টাইনস ডে। অনেকেই ঘুরতে আসছে। কিন্তু ভিড়ের কারণে অনেক পাঠক স্টলে ঢুকতেই পারেনি। আমরা মনে করছি, ১৭-১৮ তারিখের পর থেকে প্রকৃত ক্রেতারা বই কিনতে আসবেন।’

কথাপ্রকাশের প্রকাশক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এবার মেলার পরিসর এবং পরিধি বেড়েছে। ফলে সব পাঠকই প্রত্যেকটা স্টলে ঢুকতে পারছে। আজকের দিনের সকালের দিকে বই বিক্রি বেশি ছিল। ৪টা পর্যন্ত যারা ছিল, তারা বই কিনেছে এবং এরপর থেকেই যারা আসছে তারা ঘোরাঘুরি করছে।’

অনন্য প্রকাশনীর প্রকাশক মো. মনিরুল হক বলেন, ‘আজকে মেলায় প্রচুর মানুষ এসেছে এবং সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে। রাস্তাঘাট জ্যাম থাকায় অনেকেই ফেরত গেছে; এমন তথ্যও আমাদের কাছে আছে। আমরা চাই, মেলায় অনেক পাঠক আসুক। তারা বই কিনুক বা না কিনুক, তারা অন্তত মেলাটাকে জমজমাট রেখেছে।’

অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে যত মানুষ মেলায় এসেছে, তারা যদি একটি করে বই কিনতো তবে মেলার সব বই শেষ হয়ে যেতো। ঢাকা শহরে ঘোরাঘুরির তেমন জায়গা নেই, তাই অনেকেই ঘুরতে আসছে। আজ যুগল বেশি আসছে বইমেলায়। তারা অনেকটাই সময় কাটাতে এসেছে এখানে। কিন্তু যে অনুযায়ী মানুষ এসেছে, সে অনুযায়ী বই বিক্রি হচ্ছে না।’.

বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘যত পাঠক এসেছে মেলায়, সেই তুলনায় বই বিক্রি হচ্ছে না। তবে অনেক বই বিক্রি হয়েছে। বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। ফলে এখানে সবার সঙ্গে দেখা হওয়াতে আড্ডা দেওয়ার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এজন্য অনেক এসেছে।’

পুথিনিলয়ের প্রকাশক শ্যামল পাল বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস এবং ফাগুন হিসেবে যে পরিমাণ বিক্রি হওয়ার কথা, সে পরিমাণ বই বিক্রি হচ্ছে না। তবে এটাকে মানুষ উৎসব হিসেবে ধরে নিয়েছে। আজকে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে সবাই ঘুরতে এসেছে। এই মেলাটাকে তারা উৎসব মনে করে। সবার যে বই কিনতে হবে, বিষয়টা তা-ও না। আজকে না কিনলে অন্য দিন কিনবে। তারা তো মূলত বইয়ের সঙ্গেই থাকলো। মেলায় আজকের দিনেই বেশি বিক্রি হতে হবে, তা নয়।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০ ১২:১৮ অপরাহ্ণ