বিনোদন ডেস্ক:
বলা যায় খুব কম বয়সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। অভিনয় করে গেছেন একের পর এক ছবিতে। কখনো হয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অনঙ্গ বৌ’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলো’, আবার কখনো আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী’। প্রতিটি চরিত্রে বাংলার সিনেমাপ্রেমীদের মন কেড়ে নিয়েছিলেন ফরিদা আখতার, বাংলার প্রিয় ববিতা। এ বছর ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৭ ’-এ আজীবন সম্মাননা জানানো হলো তাঁকে। সম্মাননা গ্রহণ করে এই অভিনেত্রী বললেন, ‘আমি চিরদিন আপনাদের একজন।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-২০১৭’-এর ২০তম আয়োজনে ‘আজীবন সম্মাননা-২০১৮’ গ্রহণ করেন নন্দিত এই অভিনেত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমের অনুষ্ঠানমঞ্চে তাঁর নাম ঘোষণার পর বড় পর্দায় তাঁকে নিয়ে দেখানো হয় একটি নাতিদীর্ঘ তথ্যচিত্র। এরপর তাঁকে নিয়ে মঞ্চে আসেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস জেসমিন জামান। মিলনায়তনের সব মানুষ দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান। মঞ্চে আসেন ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’-এর গত বছরের আজীবন সম্মাননা গ্রহণকারী অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম। তিনি ববিতাকে পরিয়ে দেন উত্তরীয়, তাঁর হাতে তুলে দেন দুই লাখ টাকার চেক, সম্মাননা স্মারক ও স্মারক চেক। এ সময় মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় ববিতার বড় বোন অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দা ও ছোট বোন অভিনেত্রী গুলশান আরা আক্তার চম্পাকেও।
আজীবন সম্মাননা পাওয়া ববিতা বলেন, ‘আজকের এই স্বর্ণালি সন্ধ্যায় আমাকে এ সম্মাননা দেওয়ায় আমি ধন্য এবং গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। মেরিল-প্রথম আলোর সম্মানিত জুরিবোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। লাইফ ইজ টু শর্ট অ্যান্ড ইয়েট আ লং জার্নি। লম্বা সফরের ধূসর প্রান্তে আজ আমি আপনাদের মাঝে। লাইফ মুভস অন, আরও অনেক দূরে যেতে হবে। ‘স্বীকৃতি আর আনন্দের এই মুহূর্তে মনে পড়ছে আমার প্রয়াত বাবা-মাকে, যাঁদের উৎসাহ আমি জীবনের প্রতিটি বাঁকে অনুভব করি। আমার মেন্টর জহির রায়হান, বাংলা চলচ্চিত্রের বিশ্ববরেণ্য অস্কার বিজয়ী লিজেন্ড চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, খান আতাউর রহমান, সুভাষ দত্ত, আমজাদ হোসেন, কাজী জহির, চাষী নজরুল ইসলাম, শেখ নিয়ামত আলী, আবদুল্লাহ আল মামুন, নারায়ণ ঘোষ মিতাসহ আরও অনেককে।
‘আমার বড় বোন সুচন্দা আপা ওরফে বুজি, আমার প্রিয় বুজি, যিনি আমার কৈশোরের প্রথম প্রহর থেকে হারিয়ে যাওয়া মায়ের ভূমিকায় জড়িয়ে আছেন আজীবন, আর আমার এক বোন চম্পা, সেদিনের সেই ছোট্ট দুষ্টু মেয়েটি, এখন আমার গার্ডিয়ান। আমরা তিন বোন মিলে এক চলচ্চিত্র পরিবার। আমার চলার পথে আমার দুই বোন বিভিন্নভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সকলের সহযোগিতায় আজকের এই আমি—ববিতা। এ দেশের অগণিত দর্শক-ভক্তের ভালোবাসায় আমি সিক্ত। মনে হয়, আমি কমপ্লিট। জীবনের কাছে আর আমার কিছু চাওয়ার নাই। তবু যেতে হবে আরও দূর, অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ…
‘প্রথম আলো অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও দায়িত্বশীল পত্রিকা। আমাদের এত অস্থিরতা চারপাশে, এর মধ্যে থেকেও প্রথম আলো পত্রিকা অবজেকটিভ জার্নালিজমের প্রতি কমিটেড। হ্যাটস্ অফ টু ইউ। আমি চিরদিন আপনাদের একজন। চিরদিন বেঁচে থাকব ধানসিড়ি নদীর তীরে এই বাংলায়, যুগে যুগে কালে কালে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন, সকলকে ধন্যবাদ।’
সুন্দরী ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। তাঁর বক্তব্য শোনার পর সেই ছবির ‘আমি আছি থাকব, ভালোবেসে মরব’ গানটিই যেন বাজছিল উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার হৃদয়ে।
বোনের এ অর্জন নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত বড় বোন সুচন্দা বলেন, ‘এই সম্মাননা আমাদের পরিবারকে গর্বিত করেছে।’ বড় দুই বোনের কথা উল্লেখ করে চম্পা বলেন, ‘তাঁরা অনেক বড় শিল্পী। এই পরিবারের সদস্য হওয়ায় আমি গর্বিত।’ সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘বলা যায় তাঁরা তিন প্রজন্মের অভিনেত্রী। তাঁদের সবার সঙ্গেই আমি অভিনয় করেছি। তাঁদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি