নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কোতোয়ালেরবাগ এলাকাতে একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে রীমা আক্তার নামে এক গৃহবধূর (২২) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ গত কয়েক মাস ধরেই রীমার উপর চলমান অত্যাচারের ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। শুক্রবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় এসে এসব অভিযোগ করেন রীমার মা জোসনা বেগম। তাদের বাড়ি পাবনা জেলার সদরের সাধুপাড়া এলাকাতে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রীমার আরেক বোনের বিয়ের কারণে পরিবারের লোকজনের আসতে বিলম্ব হয়।
রীমার মা জোসনা বেগম জানান, তার ১ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে বড় হলো রীমা আক্তার। ১৪ বছর আগে তাদের পরিবার ফতুল্লার কোতোয়ালেরবাগ এলাকাতে মালেক মিয়ার বাড়িতে বসবাস করতো। ৩ বছর আগে একটি গার্মেন্টস এ কাজ করার সময়ে আলামিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে রীমার বিয়ে হয়। এরই মধ্যে রীমার পরিবারের লোকজন পাবনা চলে যান।
জোসনা বেগম আরো জানান, বিয়ের পর থেকে রীমার উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে আলামিন। রীমার শাশুড়ি জোবেদা বেগম ও ননদ বুবলি সহ স্বামী আলামিন মিলে রীমাকে মারধরের পাশাপাশি নির্যাতন করে চুল কেটে দেয়। এসব কারণে তিন মাস আগে রীমা তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। গত ২০ দিন আগে আলামিন ও তার বোন বুবলি মিলে পাবনা গিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে রীমাকে নিয়ে আসে। তখন আলামিনের কাছে ২০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়।
জোসনা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার ২৯ মার্চ ছিল আমার ছোট মেয়ের বিয়ে। ১০ দিন আগে আমি ফোন করে দাওয়াত করি। তখন আমার মেয়ে রীমা জানান যে তার স্বামীর হাতে টাকা নাই। ১০ হাজার টাকাও পাঠাতে বলে। আমি সে টাকাও পাঠাই। কিন্তু বুধবার শুনেছি রীমারে মাইরা ফালাইছে। তখন আমার বাড়িতে ছিল বিয়ের উল্লাসের আয়োজন। জোসনা বেগমের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডে শাশুড়ি জোবেদা, ননদ বুবলি ও স্বামী আলামিন জড়িত।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল জানান, নিহতের পরিবার শুক্রবার রাতে এসেছে। স্বামী আলামিনকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলায় নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে শাশুড়ি ও ননদ সহ তিন জন মিলে নির্যাতন করেছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই তিনজন পলাতক আছে। এর আগে বুধবার ২৮ মার্চ বিকেল ৪টায় এলাকাবাসী ও পুলিশ তালা ভেঙে রীমা আক্তারের লাশ ও দেড় বছরের শিশু নাহিদের লাশ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখন মায়ের পাশেই বসা ছিল দেড় বছরের শিশু নাহিদ। প্রতিবেশীদের মতে, মঙ্গলবার ২৭ মার্চ সকাল থেকে ঘর তালাবদ্ধ ছিল। এদিকে ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে রিমা আক্তারের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে লাশ ফতুল্লার কোতোয়ালেরবাগ এলাকার স্থানীয় ইউপি মেম্বারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেল ৩টায় ফতুল্লার কোতোয়ালেরবাগ এলাকার একটি বসত ঘর থেকে তালা ভেঙে রিমা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘর তালাবদ্ধ দেখেছে তারা। রিমার লাশ উদ্ধারের সময়ে পাশেই বসা ছিল দেড় বছরের শিশু নাহিদ। লম্বা সময় দেড় বছরের শিশু কিভাবে ছিল তা নিয়েও কৌতুহল সবার ।
এলাকাবাসী জানান, আল আমিনের বাবা আছিল্লা সর্দার ৬ বিয়ে করেছে। আল আমিন ওই ষষ্ঠ স্ত্রী জোবেদা বেগমের ছেলে। ৬ ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট আল আমিন। আছিল্লা সর্দারের মৃত্যুর পর আল আমিন ও তার বড় ভাই বাবু দুই শতাংশ জমিতে টিনের ছাপড়া ঘর তুলে দুই রুমে দুই জন স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছে। তার মা জোবেদা আল আমিনের সঙ্গেই থাকেন। ঘটনার দিন কোথায় ছিল কেউ তাকে দেখেনি।
দৈনিকদেশজনতা/ এফ আর