করোনাভাইরাসের প্রভাবে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আর কোলস্টেরিজে বিদেশ মাছ এনে তা মেয়াদোত্তীর্ণ করে বিক্রির অভিযোগে আরও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া এসব অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের আতঙ্ককে পুঁজি করে পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীরা চড়া দামে প্রায় তিনগুণ দামে পেঁয়াজ আলু বিক্রি করছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার ভোর ছয়টা থেকে যাত্রাবাড়ীর পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালিয়ে এই জেল-জরিমানা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আইস অ্যান্ড ফ্রিজিং লিমিটেডের উত্তম কুমার সাহা, আল মামুন প্রদীপ চক্রবর্তী ও মো. ইউসুফ।
রাজবাড়ী বাণিজ্যালয়ের মো. মাসুদ রানাকে এক লাখ টাকা, সাদিয়া বাণিজ্যালয়ের মো. রাসেলকে এক লাখ টাকা, বৈশাখী সোনারগাঁ বাণিজ্যালয়ের মো. উজ্জলকে এক লাখ টাকা, দরদী বাণিজ্যালয়ের জাহিদুল ইসলামকে এক লাখ টাকা, ভিশন বাণিজ্যালয়ের মো. হাসিবকে এক লাখ টাকা, নীড় এন্টারপ্রাইজের মো. জাকির হোসেনকে এক লাখ টাকা ও এক বছরের জেল, মদিনা ট্রেইডার্সের মাসুদ রানাকে ৫০ হাজার টাকা ও ছয় মাসের জেল, নওফা এন্টারপ্রাইজের মো. সফি উদ্দিনকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও এক বছরের জেল, সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের রাহানুর ইসলাম সজিবকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও এক বছরের জেল, আবু বক্কর ট্রেডার্সের আবু সাঈদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমনা ও ছয় মাসের জেল, চিশতিয়া বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের মো. আজিম চাকলাদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা লৌহজং বাণিজ্যালয়ে মো. সাগর খানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের মো. লিটনকে এক লাখ টাকা, ফয়সাল বাণিজ্যালয়ের রসমত খাকে ৫০ হাজার টাকা, জয়পুরহাট বাণিজ্যালয়ের মো. ফরহাদকে এক লাখ টাকা, শাপলা ট্রেডার্সের মো. কামাল শেখকে দেড় লাখ টাকা, কেয়া মনি এন্টারপ্রাইজের আবদুল কুদ্দসকে ৫০ হাজার টাকা, মাইজ ভান্ডারী ট্রেডার্সের আবদুল মালেককে ৭৫ হাজার টাকা এবং আমেনা বাণিজ্যলয়ের গিয়াস উদ্দিনকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সারোয়ার আলম বলেন, ‘করোনার কারণে জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকের মধ্যেই এক দিনে কয়েক মাসের বাজার করার প্রবণতা দেখা গেছে। এই সুযোগে আমাদের কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম ৩-৪ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, পাইকারি বাজারে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৮ থেকে ৩১ টাকা। শুক্রবার তারা পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। অথচ এটা পেঁয়াজের সিজন। দেশে প্রচুর মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারা মিলে এই কাজগুলো করেছেন।’
ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা এই করোনাভাইরাস বা মানুষের অতিরিক্ত কেনাকাটার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়াবে তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব। এছাড়াও জনগণ ও ক্রেতাদের অনুরোধ করব আপনারা একইসঙ্গে দুই তিন মাসের বাজার করবেন না। আপনারা সর্বোচ্চ সাত দিনের বাজার করতে পারেন। সবাই এভাবে কেনাকাটা করতে গেলে দাম বাড়িয়ে ফেলবে তারা।
ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কে কত টাকা নিচ্ছে তা নজরদারি করছি। সব ক্রেতাকে অনুরোধ করছি, আপনারা ভাউচার ছাড়া কেউ পণ্য ক্রয় করবেন না। আমরা দেখতে চাই, কে কোন পর্যায়ে কত টাকা বাড়িয়েছেন।’