খুলনা প্রতিনিধি:
নির্বাচন কমিশন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে আজ শনিবার। সেদিকে আজ দৃষ্টি সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকদের। মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনী তফশিলে আগামী জুনের শেষ অথবা জুলাই মাসের প্রথম দিকে ভোট গ্রহণের তারিখ পড়তে পারে। তাহলে নির্বাচনের অন্যান্য প্রক্রিয়াও সে অনুযায়ীই হবে।
এদিকে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। যদিও বেশ আগে থেকেই মাঠে ব্যানার-পোস্টারে শুভেচ্ছার মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিয়েছেন অনেকেই। তবে, ৪টি দলের ৭জন প্রার্থী বর্তমানে জোর আলোচনায় রয়েছেন। বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এখনও কেসিসির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। দু’টি দলেই গ্রিন সিগনালে রয়েছেন একাধিক নেতা। নৌকা আর ধানের শীষের প্রার্থীতা নিয়েই সাধারণ মানুষের কৌতুহল। কোন দল থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন- এটিই জানার আগ্রহ সবার মধ্যে। তবে, আজ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরই দ্রুত সে অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
মেয়র পদে দলীয় প্রতীক পেতে কেন্দ্রে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। নগর পিতার চেয়ার পুনরুদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টায় আওয়ামী লীগ। আর জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় বিএনপি। এবার আওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বেশ আগে থেকেই নগরজুড়ে পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার দিয়ে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের একাধিক নেতা রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কে টিকে থাকবেন- সেটি নিয়েই চলছে আলাপ-আলোচনা।
সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মেয়র পদের প্রার্থীরাই। এই প্রথমবার দলীয় প্রতীকে মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। মেয়র পদে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক, আর কেইবা পাচ্ছেন বিএনপির ধানের শীষ- তা নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য প্রচারণায় রয়েছেন কেসিসির বর্তমান মেয়র ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সাবেক মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমানে বাগেরহাটের রামপাল-মংলা আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, জেলা বিএনপি সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা, সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান পপলু, জাতীয় পার্টি (জাপা) নগর আহবায়ক এসএম মুশফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টি (জেপি) নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদ আহম্মেদ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক। তালুকদার আব্দুল খালেক এবং মনিরুজ্জামান মনির পক্ষে কোন প্রচারণা শুরু না হলেও বাকিরা ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিয়েছেন।
সূত্র মতে, কেসিসি নির্বাচনের পরের বছর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মংলা) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসাবে দলীয় নেতাকর্মীদের আলোচনাতেও এগিয়ে আছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তালুকদার খালেককে মেয়র প্রার্থী করা না হলে কে পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন- তা নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ধোয়াশা।
অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ফের প্রার্থী হিসাবে এগিয়ে থাকলেও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা এবার মেয়র প্রার্থী হিসাবে আগে-ভাগে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থী হিসাবে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে সেটি প্রত্যাহার করেছিলেন। ইতোমধ্যে তার পক্ষে পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেন, মেয়র প্রার্থী হিসাবে অনেকেই দলের কাছে মনোনয়ন চাইতে পারেন, এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। কারণ সংসদ নির্বাচনের আগেই মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই গুরুত্বের সঙ্গে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন তিনি। এছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক থাকবে নৌকা। এবার তাই কারো বিরোধীতা করার সুযোগ থাকবে না।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সবাইকে দলের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। দলই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। আর দলীয় প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষেই নেতাকর্মীরা নির্বাচন করবে। তবে, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি আদৌও কোন নির্বাচনে যাবে কি-না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসির সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি (আনারস) ১ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮ ভোট।
সর্বশেষ নির্বাচনে প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত খুলনা মহানগরীর ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ জন। চলতি বছরের ১৫ জুন বর্তমান পরিষদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি