স্পোর্টস রিপোর্টার
ইংল্যান্ডের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৭ সালে। চার বছর পর ২০১১ সালে অ্যালিস্টার কুক-মরগানদের সহকারী কোচও হয়েছিলেন রিচার্ড হ্যালসল। ২০১৪ সালের অক্টোবরে এই জিম্বাবুইয়ানকে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) তুষ্ট ছিল একজন হাইপ্রোফাইল কোচ পাওয়ায়।
ব্যক্তিগত জীবনে ইংল্যান্ডে থিতু হওয়া জিম্বাবুয়ের সাবেক এ ক্রিকেটারের উপর বিসিবির বিশ্বাসের খুঁটি শক্ত ছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের যুগ অব্দি। তারপরই ক্রমে বিসিবির ঊর্ধ্বতনদের কাছে নড়বড়ে হতে থাকে হ্যালসলের অবস্থান। তার দ্বৈত চরিত্রের খোলস উন্মোচন হয়ে উঠে বিসিবির কাছেও। সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছেঁটে ফেলার ছক, বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ের কাছে খেলোয়াড়দের নিয়ে রং মাখানো কথা উপস্থাপন, আবার খেলোয়াড়দের কাছে বোর্ড সম্পর্কে কটূকথা বলার মিশনে ছিলেন হ্যালসল।
প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান পরিষ্কার হতেই তিনি বিসিবির কাছে গুরুত্ব হারান। সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট, টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে দেশে ফিরে যান হ্যালসল। প্রায় বাধ্যতামূলক ছুটি ছিল এটি। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন সর্বশেষ বাংলাদেশের সহকারী কোচের দায়িত্বে থাকা এ ৪৯ বছর বয়সী কোচ। বিসিবিও কালবিলম্ব না করে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। তাতেই বিসিবির সঙ্গে হ্যালসলের সম্পর্ক চুকে গেল।
বিসিবির বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির অবসরে বড় ইন্ধন ছিল হ্যালসলের। মূলত গত জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগেও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, টিম ম্যানেজমেন্টের মিটিংয়েই হ্যালসলের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে উঠে বোর্ডের কাছে।
সূত্র জানায়, সেই মিটিংয়ে বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের কাছে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের খণ্ডিত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে সফল ওপেনার তামিম ইকবাল ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে। যেখানে দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেই ম্যাচের বিভিন্ন সময়ে তাদের সংগ্রামের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন তিনি। যে সময়ে তামিমের স্ট্রাইক রেট কম, মাশরাফির উইকেট নেই, বোলিং গড় বেশি। দেশের দুই সফল ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সের এমন খণ্ডিত নেতিবাচক চিত্র দেখেই বোর্ড কর্তাদের কাছে হ্যালসলের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়।
এসব ছাড়াও হেড কোচ বিষয়ে বিসিবির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ, আশাহত ছিলেন হ্যালসল। হাথুরুসিংহে পরবর্তী সময়ে টাইগারদের হেড কোচ হওয়ার আশায় বিভোর ছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বরে একদিনের মিটিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছিলেন। পরে তার আশায় গুড়েবালি হয়। খালেদ মাহমুদ সুজনকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর করে বিসিবি কাউকেই হেড কোচের দায়িত্ব দেয়নি। সর্বশেষ নিদাহাস কাপে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশকে ভারপ্রাপ্ত হেড কোচের দায়িত্ব দেয় বিসিবি। যা নিয়ে যারপর নাই হতাশ ছিলেন হ্যালসল।
ফিল্ডিং কোচ থেকে সহকারী কোচের দায়িত্ব পাওয়া এই কোচ হাথুরুসিংহের দোসর হিসেবেই পরিচিত ছিলেন জাতীয় দলে; কিন্তু হাথুরুসিংহে চলে যেতেই বদলে যান হ্যালসল। মিডিয়ার সামনে বাংলাদেশের সাবেক লঙ্কান কোচের অবদানকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন অবলীলাক্রমে।
পদত্যাগপত্রে পারিবারিক কারণ বললেও আদতে দ্বি-মুখী অবস্থানের কারণে হ্যালসলের বাংলাদেশ অধ্যায় আর দীর্ঘায়িত হয়নি। যদিও ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে চুক্তি ছিল তার।
গত মঙ্গলবার বিসিবির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, চার বছর কাজের পর বিদায় বেলায় নিজের বিবৃতিতে হ্যালসল বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভুলবেন না। অপ্রীতিকর বিদায়ের কারণে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশকে ভুলে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হবে।