বিনোদন ডেস্ক:
চার বছর বয়স থেকে ছবি করছেন। ক্যামেরার সামনেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য যেন। প্রথম ছবি, ‘থুনাইভান’ (১৯৬৭) থেকেই ‘বেবি শ্রীদেবী’ হিট। সাতের দশকের মাঝামাঝি অবধি শিশু অভিনেত্রী হিসেবেই পরপর ছবি করে গিয়েছেন। হিন্দি ছবিও তাকে প্রথম বালিকা চেহারাতেই দেখে। ১৯৭৫ সালের ‘জুলি’ ছবিতে নায়িকা লক্ষ্মীর বোন সেজেছিলেন শ্রীদেবী। পরের বছর মাত্র ১৩ বছর বয়সে নায়িকা।
এরপর আর থামেননি। শ্রীদেবীর ছটায় অনেক নায়কই ম্লান হয়ে যেতেন। সানি দেওল তো এক সময় বলেই দিলেন- শ্রীদেবীর সঙ্গে আর কাজ করবেন না। কারণ ছবিতে শ্রীদেবী থাকলে নায়কের কিছু করার থাকে না। শ্রীদেবী নিজে আবার তখন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ছবির প্রস্তাব ফেরাচ্ছেন। কারণ, শোভাবর্ধক উপগ্রহ হয়ে থাকায় তার উৎসাহ নেই। আটের দশকের সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীর তখনও পর্যন্ত একসঙ্গে মাত্র দুটো ছবি, ‘ইনকিলাব’ আর ‘আখরি রাস্তা’।
ছবিপিছু টাকার অঙ্কে অমিতাভের পরেই তিনি। ক্যামেরা চালু হলেই বিদ্যুৎলতা! ফ্রেমে থাকলে চোখ ফেরানো অসম্ভব। শ্রীদেবী আসলে বরাবর চ্যালেঞ্জের মুখেই জ্বলে উঠেছেন সবচেয়ে বেশি। হিন্দি ছবি নায়িকা হিসেবে তাকে প্রথম পায় ‘সোলওয়া সাওন’-এ (১৯৭৯)। চলেনি সেটা। হিন্দি উচ্চারণ নিয়েও কথা ওঠে। শ্রী কিছুদিন সরে থাকলেন দক্ষিণে। চার বছর পরে যখন ফিরলেন, বলিউড শাসন করে তবেই ছাড়লেন।
বিখ্যাত তামিল পরিচালক কে বালচন্দ্রের ছবি ‘মুন্দ্রু মুদিচু’ (১৯৭৬)। সঙ্গে কমল হাসন আর রজনীকান্ত। গায়ত্রী, ১৬ ভায়াথিনিলে, সিগাপ্পু রোজাক্কাল— কখনও কমল, কখনও রজনীর সঙ্গে শুরু হল শ্রী-র পরপর হিটের পালা। দক্ষিণের অধিকাংশ বড় নায়কের সঙ্গেই কাজ করেছেন। শ্রী-র ছবির সংখ্যা হিন্দিতে ৭২, তেলুগুতে ৮২, তামিল ৭২, কন্নড় ৬, মালয়ালমে ২৬টি।
বলিউডে প্রথমদিকে তার সবচেয়ে পয়া নায়ক ছিলেন জিতেন্দ্র। পরপর দক্ষিণী ছবির রিমেক হচ্ছিল, জিতেন্দ্র-শ্রী জুটি কাজ করছিলেন চুটিয়ে। হিন্দি সংলাপ ডাব করে নিতেন গোড়ার দিকে, রেখাও মাঝে মাঝে গলায় দিয়েছেন শ্রী-র জন্য। পরে আর সেটা দরকার হয়নি। তবে হিম্মতওয়ালা, জাস্টিস চৌধুরি, মাওয়ালি, তোফা-র দর্শক শ্রী-কে মূলত লাস্যময়ী হিসেবেই চিনতেন।
১৯৮৬-’৮৭ থেকে শ্রীদেবী পুরোপুরি অভিনয়প্রধান চরিত্রে মন দেওয়া শুরু করলেন। ‘ঘর সংসার’, ‘সুহাগন’, ‘নাগিনা’র পরেই এল ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’। হিন্দি ছবি নৃত্যপটীয়সী অনেক দেখেছে। কিন্তু নাচের সঙ্গে কমেডিকে এভাবে মিশতে দেখেনি। শ্রীদেবীর তৈরি করা সেই রাস্তা ধরেই পরে মাধুরী দীক্ষিত হেঁটে যান। চালবাজ, চাঁদনী, লমহে, খুদা গাওয়া শুধু শ্রী-র প্রতিভার দীপ্তি ছড়াবে না, বলিউডে নায়িকাদের কাজের পরিধিই বাড়িয়ে দিয়ে যাবে। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে সম্পর্কের ঝড়, বনি কাপুরকে বিয়ে নিয়ে টানাপোড়েন, জীবনে উথালপাথাল যতই থাক, ‘অ্যাকশন’ শব্দটা শুনলেই শ্রী যেন অন্য মানুষ!
সময়ের বিবর্তনে হিন্দি ছবির গড়ন অনেক পাল্টে গেছে। সেখানেও ১৫ বছর পরে আবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জ্বলে ওঠা। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’। ‘মম’ও পছন্দ করেছিলেন দর্শক। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘জিরো’-র কাজ শেষ হয়েছিল। লম্বা ইনিংসের স্বপ্ন দেখাতে দেখতে এক নিমেষে স্তব্ধ হয়ে গেল সব।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

