২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০৮

শরীরের ভেতরের যেসব অঙ্গ ছাড়াও আপনি বাঁচবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

মানবদেহের অভ্যন্তরে এমন ৯টি অঙ্গ রয়েছে যা না থাকলেও আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন। যদিও এসব অঙ্গগুলো জীবনযাপনকে অনেক করে তোলে কিন্তু মানব শরীর এমন ভাবে গঠিত যে, নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ ছাড়াও শরীর কাজ করতে পারে।

* একটি ফুসফুস
আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস কার্য সম্পাদন করতে অন্তত একটা ফুসফুসের প্রয়োজন, কিন্তু আরেকটা ফুসফুস ক্যানসার, যক্ষা অথবা অনান্য ফুসফুসীয় রোগে কেটে ফেলতে হতে পারে। একটি ফুসফুস দিয়ে শ্বাস নেয়া কঠিন হলেও, জীবনযাপন করা সম্ভব। রেসপাইরেটরি কেয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব রোগীরা একটি ফুসফুস হারান তাদের বায়ু ধারণক্ষমতা প্রতিসেকেন্ডে ৩৫ শতাংশ কমে যায়। মায়ো ক্লিনিকের ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের সার্জিক্যাল ডিরেক্টর জুলিয়ে হেমবাচ বলেন, ‘ফুসফুস যেহেতু বক্ষের একটি নির্দিষ্ট গহ্বরে থাকে, তাই এটার আর বড় হওয়া সম্ভব নয়।’

মলাশয়
কোলোরেক্টার ক্যানসার বা বাওয়েল রোগ যেমন ক্রোন’স বা  আলসারেটিভ কোলাইটিস এর চিকিৎসায় বৃহদান্ত কেটে ফেলতে হতে পারে। এমনকি চিকিৎসক রেক্টাম সহ কাটতে পারে। ডা. হেমবাচ বলেন, আপনার সার্জন ক্ষুদ্রান্ত্র দিয়ে থলি যুক্ত করতে পারেন এনাসের (পায়ুপথ) মতো করে যা দিয়ে পায়খানা ঠিকমতো হবে, অথবা পেটের ক্ষুদ্রান্ত্রতে জমা হওয়া বর্জ্যগুলোকে বের করার জন্য শরীরের বাইরে থলি সংযুক্ত করতে পারেন। এ অবস্থায় ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য রোগীকে খাবার পরিবর্তন ও ডাক্তারের আরো পরামর্শ মেনে চলতে হয়।

যৌনাঙ্গ
যদিও যৌনাঙ্গ আপনার ভালোবাসার জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য নয়। এক গবেষণায় দেখা যায়, নারীদের যৌন জীবনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি হিস্টারেকটমি বা জরায়ু অপসারণ। যদিও ওভারি কেটে ফেলায় হরমোনের ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে যৌন চাহিদা কমে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে প্রস্টেস্ট ক্যানসারের কারণে একটি টেস্টিকল বা অণ্ডকোষ কেটে ফেললেও তার যৌন জীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না বলে জানিয়েছেন, ক্লাইভল্যান্ড ক্লিনিকের গ্লিকম্যান ইউরোলজিক্যাল অ্যান্ড কিডনি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এরিখ এ ক্লেইন।

তিনি আরো বলেন, একটা অণ্ডকোষ থেকে যে পরিমাণ টেস্টোস্টেরণ হরমোন তৈরি হয়, তা সুস্থ যৌন জীবনের জন্য যথেষ্ট। আর যদি দুইটাই কেটে ফেলা হয় তাহলে তা মারাত্মক হারে কমতে থাকবে যা শুক্রাণু তৈরিতে ব্যর্থ হবে। প্রস্টেট কেটে ফেলার পর পুরুষের সাময়িক উত্থানে সমস্যা ও অক্ষমতা দেখা দিতে পারে বলে জানান ডা. ক্লেইন।

মূত্রাশয়
মূত্রাশয় ক্যানসার অর্থাৎ ব্লাডার ক্যানসার বা বিরল নিউরোজেনিক ব্লাডার (স্নায়ুতন্ত্র মূত্রাশয় নিয়ন্ত্রণ প্রভাবিত করে) রোগীর ক্ষেত্রে ব্লাডার কেটে ফেলার প্রয়োজন হয় এবং ব্লাডারের সঙ্গে প্রস্টেট,  লিম্ফ নোড বা গর্ভাশয়, ডিম্বাশয় এমনকি এর সঙ্গে যোনির অংশও থাকতে পারে বলে জানান ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিকের ইউরোলজিস্ট অধ্যাপক জর্জ প্যাকেল হাবার। ব্লাডারে প্রসাব সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত অন্ত্রের একটি অংশ মূত্র যাওয়ার পথ হিসেবে চিকিৎসকরা তৈরি করেন। ডা. হাবার আরো বলেন, অন্ত্রের অংশটি নিওব্লাডার হিসেবে কাজ করে যা মূত্রনালী দিয়ে প্রসাব বের করতে পারে, এটি রোগীদের নিজে একটি সরু নল দিয়ে বের করতে হয় অথবা আরেকটি পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে একটি থলিতে মূত্র এসে জমা হয়। নিওব্লাডারে থলেতে মূত্র পূর্ণ হলে তা বেশিক্ষণ রাখতে পারে না, রোগীকে ৩-৪ ঘণ্টা পর পর ফাঁকা করতে হয়, তবে এতেও জীবন স্বাভাবিক থাকে।

পিত্তথলি
লিভারে তৈরি হয় পিত্তরস যা চর্বি জাতীয় খাবার হজমে সহায়ক এবং তা পিত্তথলিতে জমা হয়। কিন্তু শরীর শুধু সেই জমাকৃত পিত্তরসের ওপরই নির্ভর করে না। বেশিরভাগ মানুষের পিত্তথলি না থাকার পরেও খাবার গ্রহণে তেমন সমস্যা হয় না বলে জানিয়েছেন ডা. হেমবাচ। তিনি আরো বলেন, তাদের অতিরিক্ত পিত্তরসের প্রয়োজন হয় না কারণ শরীর খাদ্য হজমে অভ্যস্ত হয়ে যায়। গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথরের জন্য বিশ্বে সচরাচর পিত্তথলি কেটে ফেলা হয়।

পাকস্থলী
ওজন কমানোর কিছু অস্ত্রোপচার এবং দ্রুত বর্ধনশীল পাকস্থলী ক্যানসারের (যেন অন্য অঙ্গতে ছড়িয়ে না পড়ে) ক্ষেত্রে রোগীর পাকস্থলী কেটে ফেলা হয়ে থাকে। সাধারণত পাকস্থলী খাদ্যের পরিপাকের জন্য এসিড মিশ্রিত করে হজম প্রক্রিয়া শুরু করে এবং ভিটামিন শোষণ করে থাকে। পাকস্থলী কেটে ফেললে চিকিৎসকরা খাদ্যনালীকে সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে থাকেন। অস্ত্রোপচারের পরে রোগী শক্ত খাবার খেতে পারে কিন্তু তা খুব ছোট আকারের এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে খাবারগুলো দ্রুত যাওয়ার সময় ডাম্পিং সিন্ড্রোম এড়ানোর জন্য কিছু খাবার পরিহার করা উচিত বলে জানিয়েছেন ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিকের গ্যাস্ট্রোইন্টারোলজিস্ট ডা. আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ শাতনাওয়ি। তিনি আরো বলেন, যদি খাদ্য ডাম্প করে ক্ষুদ্রান্ত্রে পড়ে যায় তাহলে মাথা ঘুরায়, হালকা মাথাব্যথা এবং ঘাম ঝরতে পারে সঙ্গে বমি হয়ে আসতে পারে। তখন বাথরুম দ্রুত যেতে হতে পারে।

প্লীহা
প্লীহার মূল কাজ রক্ত পরিশোধন করা কিন্তু এটি ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত হলে অপসারণ করা হতে পারে যেমন ইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা রোগে আক্রান্ত হলে। যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্লীহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই এটি কেটে ফেলা হলে রোগী প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডা. হেমবেচ বলেন, ‘প্লীহা অপসারণের পর রোগীদের নির্দিষ্ট টিকা দিতে হবে যেহেতু তারা আরো বেশি ঝুঁকিতে থাকে নির্দিষ্ট কিছু সংক্রমণের।’

একটি কিডনি
যদিও কিডনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, তবুও মানুষ কিডনি দান করতে সক্ষম। কিন্তু কেন? কারণ দুইটা কিডনি শরীরের চাহিদা পূরণ করার চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। আপনি শুধু একটি কিডনি দিয়েও বেঁচে থাকতে পারবেন। ডা. হেমবেচ বলেন, ‘একটি কিডনি দান করলে দাতার কার্যক্ষমতা কমে কিন্তু আরেকজনের জীবন বাঁচতে পারে দান করা কিডনি। সুস্থ একটি কিডনি দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জীবনযাপন করা যায়।’

অ্যাপেন্ডিক্স
প্রকৃতপক্ষে অ্যাপেন্ডিক্সের কাজটা কি তা এখনো নিশ্চিত নয়। কিছু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি একটি অর্থহীন অঙ্গ যা আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য একটি উদ্দেশ্য সাধন করেছে, যদিও সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে এটি ‘ভালো’ ব্যাকটেরিয়া নিরাপদ রাখছে। কিছু মানুষ জন্য যদিও এটা ভালো চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ড. হেমবাচ বলেন, ‘এটি অবরূদ্ধ এবং সংক্রমিত হয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো সরানো হয়।’ এমনকি যদি রোগ প্রতিরোধে অ্যাপেন্ডিক্সের কোনো ভূমিকা থেকে থাকে, তারপরও এটি অপসারণের সঙ্গে যুক্ত কোনো দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য প্রভাব নেই। তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮ ১:৩৯ অপরাহ্ণ