আজ ২৪ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থান দিবস। ১৯৬৯ সালের এ দিনে এ দেশের মানুষ স্বৈরশাসক আইয়ূব খানের শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল, দখলে নিয়েছিল রাজপথ। জনতার সে সর্বাত্মক বিদ্রোহকে পেশিশক্তি দিয়ে ঠেকাতে চেয়েছিল সে সময়ের শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা নিদারুনভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। সংক্ষুব্ধ জনতার সাগরে যে দ্রোহের উর্মিমালা সৃষ্টি হয়েছিল, তা তছনছ করে দিয়েছিল স্বৈরশাসকের তখতে তাউস। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনের যবনিকাপাত ঘটেছিল সে গণ অভ্যূত্থানের প্রেক্ষাপটে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো দিবসটি পালনের জন্য সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আইয়ূব খান। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তিনি জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার কেড়ে নেন নির্মমভাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ অব্যাহত থাকে। সে সাথে কেড়ে নেয়া হয় গণতান্ত্রিক অধিকার। আইয়ূব সরকারের এ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়ায়। সারা দেশে গড়ে ওঠে স্বৈরশাসনবিরোধী গণ আন্দোলন। দলমত জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সে আন্দোলনে অংশ নেয় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে। দীর্ঘ নয় বছরের আন্দোলন তুঙ্গে উঠে উনসত্তরের জানুয়ারি মাসে। ২০ জানুয়ারি স্বৈরশাসকের পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। তার হত্যাকা-ের প্রতিবাবাদে ২৪ জানুয়ারি ডাকা হরতালে সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে। সেদিন পুলিশের গুলিতে শাহাদত বরণ করেন ঢাকার নবকুমার ইনষ্টিটিউটের ছাত্র মতিউর রহমান। তার মৃত্যু আন্দোলনের অগ্নিকু-ে ঘৃতাহুতি দেয়। সারা পূর্ব পাকিস্তানে যেন আগুন জ্বলে উঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা অবস্থান নেয় রাজপথে। আবশেষে জনতার আন্দোলনের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয় স্বৈরশাসক আইয়ূব খান। লৌহমানব খ্যাত আউয়ূব খান জনতার রোষের মুখে লেজ গুটাতে বাধ্য হয়।
বস্তুত, যুগে যুগে স্বৈরশাসকদের বেলায় এমনটিই ঘটেছে। সাধারণত স্বৈরশাসকরা রাষ্ট্রক্ষমতা ও অস্ত্রের বলে বলীয়ান হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। তারা জনগণের অধিাকরকে পদদলিত করে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সে অমানবিক শাসনকে প্রলম্বিত করার প্রয়াস পায়। এক সময় তারা নিজেদেরকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিরোধ্য বলে ভাবতে শুরু করে। তারা নিজেদেরকে রাজাধিরাজ মনে করে যা খুশি তাই করতে শুরু করে। তারা এটা ভুলে যায় যে, জনগণ জেগে উঠলে তাদের পালাবার পথ থাকবে না। অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগণ যখন বিদ্রোহ ঘোষণা করে, প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখন স্বৈরশাসকরা হয়ে উঠে হিং¯্র। তবে, শেষ রক্ষা হয় না। জনতার কাছে তাদের মাথা নত করতেই হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এর বহু নজির রয়েছে।
বাংলদেশে আজ গণতন্ত্র নেই। মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত। ক্ষমতাসীন সরকার হরণ করেছে বিরোধী দলের রাজনীতি করার অধিকার। স্বৈরশাসকের সাথে বর্তমান সরকারের পার্থক্য করা দূরূহ ব্যাপার। দেশবাসী আজ এক অবরুদ্ধ পরিবেশে বসবাস করছে।এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায় জনগণকে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা। মনে রাখা দরকার স্বৈরশাসকরা যতই শক্তি প্রদর্শন করুক না কেন, নৈতিকভাবে তারা হয় অত্যন্ত দূর্বল। জনগণের তীব্র আন্দোলনের ধাক্কা সামলানো তাদের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় না। ২৪ জানুয়ারি প্রতি বছর আমাদেরকে এ সত্যটিই স্মরণ করিয়ে দেয়।