বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টিলেজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যেখানে বিশ্বে বসবাসযোগ্য অনুপোযুক্ত শহরের মধ্যে ঢাকা তৃতীয়। ২০১৯ সালের ১৪০টি শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৮তম। সবচেয়ে বেশি বসবাস অনুপযোগী ১০টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় নাইজেরিয়ার লাগোস। তালিকাটির সবচেয়ে শেষে (১৪০তম) অর্থাৎ বিশ্বের স্বল্পতম বাসযোগ্য বা সবচেয়ে বেশি বসবাস অনুপযোগী শহর হলো মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক।
এখানে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দামেস্ক’র কাছাকাছি কেন ঢাকার অবস্থান? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সমস্যা। সেসব সমস্যার সমাধান খুব সহজে হবে না, এটিও সত্য। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- ঢাকা কোনও একক প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনায় পরিচালিত হয় না। এজন্য সমস্যার দায়ও কেউ নিতে চায় না। এ কারণেই সমস্যাগুলো আরও জটিল আকার ধারণ করে। এছাড়া বিশে^র সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। একটি সাধারণ কাজের জন্যও সারাদেশের মানুষ এই শহরে ছুটে আসে। শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই ঢাকা কেন্দ্রিক। তাই বসবাসের অনুপযোগী হলেও এখানেই থাকতে হয় নিরুপায় মানুষগুলোকে। আর ঢাকা শহরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো একদিনে তৈরি হয়নি। যুগের পর যুগ ধরে সমস্যা জিইয়ে রাখা, সমস্যার প্রকটতা অনুসারে গৃহীত পদক্ষেপের অপ্রতুলতা, দূরদর্শীতা ছাড়া প্রকল্পগ্রহণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, খামখেয়ালি, অন্যের ওপর দোষারোপ এবং সমন্বয়হীনতাই সমস্যা তৈরির পেছনের কারণ।
তবে ঢাকাকে বসবাসের উপযোগী করতে একেবারেই যে চেষ্টা হয়নি, বিষয়টি এমনও নয়। এ বিষয়ে অনেক আলোচনাও হয়েছে। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি বললেই চলে। যার সর্বশেষ প্রমাণ আমরা এবারের তালিকায় দেখেছি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার দেশকে উন্নত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু রাজধানীকে বসবাসের উপযুক্ত না করে উন্নত দেশ কিভাবে সম্ভব? তাই ঢাকাকে উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের উপযুক্ত রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে এখনই সচেষ্ট হতে হবে।