লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
ত্বকের যত্ন নিয়ে নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। ত্বক শরীরের এমন একটি অঙ্গ, যা বাইরে থেকে দেখা যায়। তাই ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। সৌন্দর্যের অনেকটাই নির্ভর করে এই ত্বকের ওপর। সে কারণে রূপচর্চার অধিকাংশ রসদ ব্যবহৃত হয় ত্বকের ওপর। রূপচর্চার ব্যবহৃত সব উপকরণই যে ত্বকের সৌন্দর্য বিকাশে ভূমিকা রাখে, তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু উপাদান ত্বকের ক্ষতিও করে থাকে।
তা ছাড়া কসমেটিকস নিয়েও অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে কিংবা কারো কথায় অনেকেই যেমন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর প্রসাধন বেছে নিচ্ছেন বা বিনা প্রেসক্রিপশনে ত্বকের কোনো ক্রিম ব্যবহার করছেন, তেমনি অনেকেই আছেন বন্ধু-বান্ধবী কিংবা আত্মীয়স্বজনের কথায় ত্বকের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান এড়িয়ে যাচ্ছেন। উভয় ক্ষেত্রেই ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটিতে অবাঞ্ছিত চিকিৎসার জন্য আর অন্যটিতে বাঞ্ছিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য। কিছু কিছু বিউটিশিয়ান, ডার্মাটোলজিস্ট কর্তৃক প্রেসক্রিপশনকৃত আলফা হাইড্রোক্সি ক্রিম কিংবা ট্রোটিনয়িন (ভিটামিন এ থেকে উদ্ভূত) ক্রিম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন। বিউটিশিয়ানদের কেউ কেউ মনে করেন, এই ওষুধধর্মী প্রসাধনগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি করে থাকে, এগুলো ত্বকের বাহ্যিক আস্তরণকে পুরোপুরি তুলে দিয়ে ত্বক পাতলা করে ফেলে। কিন্তু ডার্মাটোলজিস্টরা মনে করেন, এই ধারণা একেবারেই সত্য নয়। বরং তাঁদের কথা হচ্ছে, চর্মবিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো এ দুটো ক্রিম ব্যবহারে ত্বক বার্ধক্যজনিত ভাঁজ এবং ব্রণের চিকিৎসাসহ আরো কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে এসব পিলিংধর্মী রাসায়নিক উপাদান মূলত ত্বকের উপরিভাগের মৃতকোষের ওপর কাজ করে থাকে। তা ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রোটিনয়িন কোলাজেন তৈরিতে উদ্দীপনা জোগায়। কোলাজেন হচ্ছে এ ধরনের স্পঞ্জি প্রোটিন, যা ত্বককে পূর্ণতায় ভরে দেয় এবং ত্বকের কোষসমূহের বন্ধনকে শক্তিশালী করে তোলে। এ কারণে বলা যায়, এটি ত্বকে কিছুটা পুরুত্ব এনে দেয়। উচ্চ ঘনত্বে এএইচএএস কোলঅজেনের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তথাপি একসঙ্গে বেশ কয়েকটি এক্সফলিয়েটিং জাতীয় উপাদান (যেসব উপাদান ব্যবহারে ত্বকের মৃতকোষ ঝরে যায়) ব্যবহারে ত্বক খসখসে মনে হতে পারে এবং সে রকম দেখাতেও পারে যদি সেই এক্সফলিয়েটিং উপাদানটি আবার বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। তেমনটি হয়ে থাকলে তখন একটি মাত্র ভাঁজ প্রতিরোধকারী ক্রিম বেছে নিতে হবে এবং ধীরগতিতে সেটি ব্যবহার শুরু করতে হবে। অর্থাৎ শুরুতে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে হবে। আর এই সময়ের মধ্যে ত্বক নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। যদি কোনো ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড উত্তেজনাকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে সেটি বাদ দিয়ে বিটা হাইডোক্সি এসিড ব্যবহার করা যেতে পারে।
সুতরাং ব্রণের চিকিৎসাই হোক আর ত্বকের ভাঁজ দূর করার জন্যই, যেকোনো ত্বকের চিকিৎসায় ডার্মাটোলজিস্টের (চর্ম বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। চিকিৎসক নয় এমন কারো কথায় কোনো চিকিৎসা যেমন শুরু করাটা বোকামি, তেমনি বিশেষজ্ঞের দেওয়া কোনো চিকিৎসা তাদের কথায় বন্ধ করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মনে রাখবেন, চিকিৎসা এতটা সহজ ব্যাপার নয়। বছরের পর বছর শিক্ষা প্রশিক্ষণের পর চিকিৎসক যা অর্জন করেন, তা হঠাৎ করেই কারো পক্ষে অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি কেউ তেমনটি দাবি করে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে এ ক্ষেত্রে সে মূর্খ ছাড়া আর কিছু নয়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি