ধর্ম ডেস্ক :
আপনি যত বিপন্ন, ব্যথিত বা চিন্তিতই হোন না কেন হতাশ হবেন না, হাল ছাড়বেন না। পৃথিবীতে ভালো-মন্দ অবস্থা সবার জীবনেই আসে। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা ছিলেন নবী-রাসূলগণ (আ.)। তাদেরকেই আল্লাহ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখোমুখি করেছেন। এটা কেবল পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষায় মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক অবস্থানে থাকলে সাফল্য আপনার আসবেই। আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় তাই মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। ছুটে আসুন আল্লাহর দয়ার ছায়ায়। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে এসব পড়বে, আল্লাহ তার অন্তর উন্মোচন করে দেবেন। ফলে কষ্টের কারণ দূর হয়ে যাবে। এ হলো দুশ্চিন্তা-টেনশনের নববী চিকিৎসা।
ইমাম আহমদ ও তিরমিজি (রহ.) সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মাছের পেটে অবস্থানকালে জুন্নুন বা মাছওয়ালা তথা ইউনুস (আ.) যে দোয়া পড়েছেন, এটি যে কোনো মুসলিম যে কোনো সময় পড়বে, আল্লাহ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করবেন।’ (তিরমিজি : ৩৫০৫; মুসনাদ আহমাদ : ১৪৬২)।
দোয়াটি হলো-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোলিমীন।
অর্থ : ‘আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আপনি সপ্রশংস মহান, নিশ্চয় আমি জুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
দ্বিতীয় দোয়া
ইমাম আহমদ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদ বা দুশ্চিন্তায় দোয়াটি পড়বে, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তার বিষাদকে আনন্দে পরিণত করে দেবেন।’ (মুসনাদ আহমাদ : ৪৩১৮)।
দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، وَابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী।
অর্থ : হে আল্লাহ, নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে। তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল। তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার নিকট তোমার প্রত্যেক সেই নামের অসিলায় প্রার্থনা করছি- যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গায়বি ইলমে নিজের নিকট গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।
তৃতীয় দোয়া
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় বলতেন :
«لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ العَلِيمُ الحَلِيمُ، لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ العَرْشِ العَظِيمِ، لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ رَبُّ العَرْشِ الكَرِيمِ»
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আলীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়ারাব্বুল আরদি ওয়ারাব্বুল আরশিল কারীম।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই; যিনি সর্বজ্ঞ, সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; যিনি মহান আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য আরাধ্য নেই; যিনি আকাশমণ্ডলি, পৃথিবী ও সম্মানিত ‘আরশের অধিপতি। (সহিহ বুখারি : ৭৪২৬)।
প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করলে দেখবেন, তিনটি দোয়াতেই আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা, অংশীদারিত্বের অস্বীকৃতি ও নিজের যাবতীয় ভুলের স্বীকারোক্তি রয়েছে। অতএব নিজের দোয়া কবুলের জন্য এ তিন বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে চাইলে অবশ্যই আপনার যে কোনো টেনশন-পেরেশানি দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ