স্বাস্থ্য ডেস্ক:
শীত পড়তে শুরু করেছে পুরোদমে। সুতরাং এরকম শীতে বাড়তি প্রস্তুতি নয় সর্বোচ্চ প্রস্ততিই নেয়া উচিত। প্রস্তুতির বিষয়ে অনেকেরই হয়তো ধারণা আছে তাই সে বিষয়ে উল্লেখ করার আগে শীত কী ধরণের সমস্যা করতে পারে সে বিষয়ে একটু বলে নেয়া ভাল। তীব্র এই শীতে ঠান্ডা, সর্দি, গলাব্যথা, হাড়ের জোড়া বা জয়েন্টে ব্যথা, পেটব্যথা ডায়রিয়া, হার্টের সমস্যা এমন কি বিষণ্ণতা পর্যন্ত হতে পারে। শীতের অসুখের অধিকাংশই ভাইরাসজনিত। আর ভাইরাসজনিত সাধারণ সমস্যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধের দরকার পড়েনা। ভাইরাস রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে একটা কথা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন, সেটি হলো- ওষুধ খেলে ভাইরাস সারে ১ সপ্তাহে আর না খেলে ৭ দিনে।
কমন কোল্ড বা ঠান্ডা লাগা:
সচরাচর দেখা দেয় এমন একটি সমস্যা এই কমন কোল্ড। কমন কোল্ড-এ আক্রান্ত হলে মূলত সর্দি, নাক বন্ধ, গলা খুসখুস করা, গলায় শ্লেষা জমে থাকা, গা ব্যথা এবং জ্বর জ্বরভাব দেখা দেয়। নাক বন্ধের জন্য মাথাভারী লাগে, মাথাব্যথা করে।
১। কমন কোল্ড প্রতিরোধের জন্য মূল কার্যকর ব্যবস্থা হচ্ছে হাত ধুয়ে নেয়া। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যার পেছনে দায়ী হচ্ছে বিশেষ ধরণের ভাইরাস।
২। আমরা যখন প্রতিদিন বিভিন্ন কাজের সময় বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং সাধারণের জন্য উন্মুক্ত জায়গা স্পর্শ করি, তখন কোন না কোনভাবে সেই জিনিসপত্র কিংবা স্থানগুলো ভাইরাস দিয়ে দুষিত হয়ে থাকলে, তা সহজেই আমাদের হাতে চলে আসে। এবার সেই হাত দিয়ে যদি নাক স্পর্শ করি তাহলে সহজেই তা নাক দিয়ে শ্বাসনালিতে চলে যাবে, খাবার খেলে পেটে চলে যাবে। পরিণামে আমাদের শরীরেও এই ভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটবে, এক সময়ে ভাইরাস সংক্রমণের প্রকাশও ঘটবে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে।
৩। সাধারণভাবে সকলের জন্য ব্যবহার্য এলাকার মধ্যে রয়েছে বাস-ট্রেনের হ্যান্ডেল, এলিভেটরের বোতাম, রেস্টরুম, কী বোর্ড, টেলিফোন, দরজার হাতল ইত্যাদি। এ কারণে ঘরে ফিরেই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেয়া জরুরি। আর যদি ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে সেক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। শুধু হাত ধোয়াই নয়, এর পাশাপাশি প্লেট, গ্লাস, কাপ, টাওয়ালে এগুলোও পারিস্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে ঘরে কেউ কমন কোল্ড-এ আক্রান্ত হয়ে থাকলে এইসব জিনিসপত্র আক্রান্তের জন্য পৃথক করে দেয়াই উত্তম। যদিও আজকাল অধিকাংশ লোকজনই এই ধরণের জিনিসপত্র পৃথকভাবে নিজেরটাই ব্যবহার করে থাকেন।
৫। তাছাড়া আক্রান্তের সংস্পর্শ কিছুটা এড়িয়ে চলাই ভালো।
৬। এক্ষেত্রে যিনি আক্রান্ত তারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় কুনইয়ের ভিতরের দিকে কিংবা বগলে মুখ ঢেকে কাজটি করবেন। নিজের হাতের মধ্যে হাঁচি-কাশি দেবেন না, তাতে হাতের মধ্যে ভাইরাস লেগে থাকবে এবং যা সহজেই স্পর্শের মাধ্যমে অন্যত্র ছড়াবে।
৭। আর হাঁচি-কাশি, সর্দির জন্য কাপড়ের রুমাল ব্যবহার না করে ডিসপোজেবল টিস্যু ব্যবহার করাই ভালো। কাপড়ের রুমালে আপনার হাত বারবার ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে থাকবে।
৮। বাইরে চলাফেরা করার সময় হাত দিয়ে নাক স্পর্শ না করাই ভালো।
৯। কমন কোল্ড থেকে উপশম পেতে নিজেকে অর্থাৎ শরীরটাকে গরম বা উষ্ণ রাখতে হবে, দরকারি শীতের কাপড়-চোপড় ব্যবহারে আলসেমী করার সুযোগ নেই বা বীরত্ব দেখানোর কিছু নেই।
১০। গরম পানীয়, স্যুপ বেশ কাজে দেয়।
১১। প্রচুর পানি, ফলের রস বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত ফলের রস পান করা ভালো। ভিটামিন সি জাতীয় ফলের রস নিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে যার অধিকাংশই এর উপকারিতার কথা বলেছে। যদিও এটি ধন্বন্তরী কোন চিকিৎসা নয় তারপরও কিছুটা উপকার আছে।
১২। বিশেষ কোন ওষুধ ব্যবহারে লাভ নেই। তবে উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। বিশেষ করে গা-ব্যথার জন্য এসিটোএমিনোফেন/প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে।
গলাব্যথা বা সোর থ্রোট:
শীতের গলাব্যথা সচরাচর ঘটে থাকে এমন একটি সমস্যা। এই গলাব্যথাকে ইংরেজিতে বলা হয় সোর থ্রোট। সোর থ্রোট মানে ঠিক প্রচন্ড গলাব্যথা নয়। সোর থ্রোট হচ্ছে গলার মধ্যে এমন এক অনুভূতি যখন গলার মধ্যে অল্প ব্যথা করবে, কিছুটা কাঁটার মত বিঁধবে, একটু জ্বলবে, অস্বস্তি হবে সাথে একটু জ্বলে যাওয়া ভাবও থাকবে। যাই হোক এটিকে মৃদু গলাব্যথাও বলা যেতে পারে। তবে মূল কথা হচ্ছে এই ধরণের সমস্যা বিশেষ করে শীতের বেলায় হয়ে থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। ভাইরাসের এই সংক্রমণের কারণ তাপমাত্রার ওঠানামা। বেশকিছু গবেষণা মতে হঠাৎ করে উষ্ণ তাপমাত্রার ঘর থেকে যদি কেউ বরফ শীতল বাইরের পরিবেশে চলে আসেন, তখন গলায় এর একটা প্রভাব পড়তে পারে। সার্বক্ষণিত ওৎপেতে থাকা শীতের আমুদে ভাইরাসরা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকে। উপযুক্ত তাপমাত্রা পেয়েই বংশবিস্তারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়, গলাব্যথায় পেয়ে বসে আমাদের।
১। যাই হোক গলাব্যথা যদি শুরুই হয়ে যায় এই শীতে, বসে থাকার উপায় নেই। কিছু একটা করতে হবে, তা না হলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই দ্রুত এবং সহজ উপায় হচ্ছে কুসুম গরম পানিতে লবন দিয়ে গড়গড়া করা। এই বিষয়টি হয়তো অনেকেরই জানা আছে, তারপরও মনে করিয়ে দিতে চাই এটি একটি বেশ কার্যকর উপশম পদ্ধতি। ১ গ্লাস ঈষৎ উষ্ণ পানিতে ১ চা চামচ লবন দিয়ে গড়গড়া করা যেতে পারে দৈনিক ২/৩ বার। এতে ইনফেকশন সারবে না কিন্তু এই লবন পানির রয়েছে প্রদাহরোধী ক্ষমতাসহ অস্বস্তি কমানোর শক্তি।
২। এছাড়া গলায় মাফলার, স্কার্ফ জড়িয়ে রাখা যেতে পারে।
৩। মাথা ঢেকে রাখতে হবে। এজন্য ক্যাপ ব্যবহার করাই উত্তম।
৪। বেশি ব্যথা হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে এন্টিবায়োটিকের মত ওষুধের দরকার নেই কারণ ইনফেকশনের কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাস।