গতকাল সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিয়েছে ২০১৭ খৃষ্টাব্দ। প্রাকৃতিক নিয়মে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল ঘটনাবহুল আরো একটি বছর। ২০১৭ সালটি আর কখনোই ফিরে আসবে না। অবশ্য আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে মানুষের স্মৃতিতে বার বার ভেসে উঠবে গেল বছরটির নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। কালের সাক্ষী হয়ে ২০১৭ সাল পৃথিবীর ইতিহাসের জাদুঘরে স্থায়ী আসন করে নিল।
পাশাপাশি আজ থেকে গণনা শুরু হলো ২০১৮ খৃস্টাব্দের। নতুন এ বছরটিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী। নতুন এ বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বাণীতে তারা বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর সুখ শান্তিও সমৃদ্ধ কামনা করেছেন।
নতুন বছরের পথচলার মুহূর্তে সঙ্গত কারণেই পেছনের দিকে চোখ ফেরাতে হয়। যে বছরটি ফেলে এলাম তা আমাদের কী দিয়ে গেল বা নিয়ে গেল, অর্থাৎ ২০১৭ সালে আমাদের প্রাপ্তি বা হারানো কতটুক তার নিকাশ করা দরকার। না হলে আগামী দিনের পথ চলার দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুধাবন করা যাবে না।
বস্তুত ২০১৭ সালটি বাংলাদেশের জন্য ছিল ঘটনা বহুল একটি বছর। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু ঘটনা ঘটেছে যার রেশ এখনো কাটেনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষা অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা সর্বজনবিদিত। খুন, গুম, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ-ধর্ষনের খবরে সংবাদপত্রে পাতা ছিল পরিপূর্ণ। এসব লোমহর্ষক খবর প্রতিদিন এসেছে গণমাধ্যমে। কিন্তু অপরাধীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে এক ধরনের ভীতি-শংকা নিয়েই দেশবাসীকে দিন গুজরান করতে হয়েছে।
গত কয়েক বছরের মতো গত বছরটিও ছিল বিরোধী দলের প্রতি সরকারের অসহিষ্ণুতার ঘটনায় ভরপুর। এ বছরও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি শিকার হয়েছে সরকারের জুলুম নির্যাতনের। যদিও বছরের শেষ প্রান্তে এসে সরকার কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছে বিএনপির প্রতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে অনুমতি দিয়েছে দলি কে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছে দলটির নেতা কর্মীরা। মোট কথা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বিএনপিকে গত বছরও বহুলাংশে বঞ্চিত রেখেছে সরকার।
ঘটনা দুর্ঘটনার বছর পেরিয়ে নতুন বছরে পা দিলাম আমরা। আমাদের প্রত্যাশা অতীতের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে সফলতার পথে এগিয়ে যাবে দেশ। আর সে জন্য দরকার মুক্ত গণতন্ত্র ও কথা বলার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা। দরকার মানবাধিকার সুরক্ষা। ঘুষ দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপরাধের টুটি চেপে ধরে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলেই আগামী বছরটি হয়ে উঠবে সম্ভাবনাময়। সে শুভদিনের প্রতীক্ষায় আছে দেশবাসী।
আগামী বছরটি হয়ে উঠুক সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির বছর। সবার ঘরে বয়ে চলুক শান্তি সুখের অমিয়ধারা, সমস্ত দুঃখ জরা ক্লেশকে অতিক্রম করে সবাই এগিয়ে যাক শুভ সম্ভাবনার দিকে- নতুন বছরের শুরুতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।