স্বাস্থ্য ডেস্ক:
হাঁপানি ও হৃদরোগ-বিজ্ঞানের সৃষ্টিরহস্যের শেষ নেই। নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবুও এমন অনেক রোগ রয়েছে যেখানে বিজ্ঞানীরা আজো যেন অসহায়।
যেমন হাঁপানি কিংবা হৃদরোগ। কতই না যন্ত্রণা। অথচ এমন কোনো ওষুধ নেই, যা প্রতিকার করতে পারে এ জাতীয় রোগ। তবে জীবনকে আরামদায়ক ও আনন্দময় করতে রোগের উপসর্গ উপশমকারী ওষুদের পাশাপাশি এক ধরনের বিশেষ ব্যায়াম রয়েছে; যা পালন করতে অভ্যস্ত হলে নিঃসন্দেহে নিজেকে এসব রোগের আক্রমণ থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
হয়তো মনে প্রশ্ন জাগবে, এ ব্যায়ামের নাম কী? আর, রোগের যন্ত্রণা কমাতে এর ভূমিকাই বা কী? হ্যাঁ- এটি হলো- ‘ডিপ ব্রিকিং এক্সারসাইজ’ অর্থাৎ ‘গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস’ নেয়া, যার ফলে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। যেহেতু হাঁপানি ও হৃদরোগে অক্সিজেনের মাত্রা রক্তে হ্রাস পায়, ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। কিন্তু এই যোগপদ্ধতি নিয়মিত অনুসরণ করলে রক্তে অক্সিজেন সংবহন বেড়ে যায়। ফলে শ্বাসকষ্ট কমে যায় এবং পরিশ্রমও করা যায় অধিক।
তা হলে চলুন জেনে নেয়া যাক প্রাকৃতিক এই পদ্ধতি করার নিয়ম কী :
প্রথমে মুক্ত বায়ুতে যোগাসনে বসুন। শুয়েও করা যেতে পারে। তারপর চোখ বন্ধ করে মনকে স্থির করুন। এখন ধীরে ধীরে যতক্ষণ সম্ভব একভাবে মুখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে শ্বাস টানুন। এরপর দম আটকিয়ে রাখুন যতক্ষণ সম্ভব। যখন আর শ্বাস বন্ধ রাখতে সম্ভব হচ্ছে না,
তখন মুখ দিয়ে বাঁশি বাজানোর ভঙ্গিতে শ্বাস ছেড়ে দিন। এভাবে আবার শ্বাস নিন, শ্বাস বন্ধ করুন এবং শ্বাস ছাড়ুন। সকাল-বিকেল পাঁচ-দশ মিনিট করে করুন প্রতিদিন।
প্রথম দিকে একটু কষ্ট হবে ঠিকই, তবে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হলে নিজেই বুঝবেন এর তাৎপর্য। তখন কতই না ভালো লাগবে আপনাকে। আসলে এ ব্যায়ামের উদ্দেশ্য হলো- ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ানো। কারণ আমরা জানি- হাঁপানি রোগের আক্রমণ তখনই বাড়ে, যখন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়া কিংবা ধুলা-বালু বা গ্যাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এখন দম বন্ধ করে রাখার ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায়, তা হলে প্রতিকূল পরিবেশে খুবই সহজে নিজেকে এর আক্রমণকারী উপাদানগুলো থেকে মুক্ত রাখা যায়।
আর হৃৎপিণ্ডের ক্ষমতা বাড়লে শরীরের প্রতিকোষে পুষ্টি সরবরাহ হবে যথাযথভাবে- স্বাভাবিকভাবেই দেহ ও মন থাকবে সতেজ ও প্রফুল্ল।
সুস্থ জীবনের জন্য ব্যায়াম :
ব্যায়াম বা প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রের ক্রিয়াকর্ম সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন রোগবালাই থেকে শরীরকে মুক্ত রাখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড হেলথের সার্জন জেনারেলের রিপোর্ট অনুযায়ী নিয়মিত শরীরচর্চা করলে :
দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয় এবং সুস্থভাবে বাঁচা যায়। হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি অথবা এ রোগের পূর্বলক্ষণ দেখা দিলেও তা রোধ করতে সহায়তা করে। তা ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা রোধ করতে সক্ষম হয়। কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ বিশেষ ধরনের ক্যান্সার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বাত প্রতিরোধে সহায়তা করে। তা ছাড়া বেদনা উপশম ও যাদের শরীরে অনমনীয় ভাব রয়েছে সেগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
হাড়ের ওজন হ্রাসের মতো অনিষ্টকর ঘটনা বা অস্টিওপোরোসিস রোধ করতে সহায়তা করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন ঝুঁকি কমায়। মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগের লক্ষণ কমায় এবং মেজাজ ফিরিয়ে আনে। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ