আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের গুরু পোপ ফ্রান্সিস জেরুজালেমের জন্য শান্তি কামনা করে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।ঐতিহ্য অনুসারে সোমবার বড়দিনের বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান। খবর: রয়টার্স ও বিবিসি।পোপ জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সংকটের একটি সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানান, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে দুই রাষ্ট্র সহাবস্থানে থাকতে পারে।
গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সেখানে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন। কিন্তু, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর থেকেই মুসলিম বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কড়া ভাষায় তার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছে। ফিলিস্তিনের বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনারা গুলি চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ জনকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রতিবাদে গত ১২ ডিসেম্বর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা পরিষদের (ওআইসি) জরুরি সম্মেলন থেকে পূর্ব জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এরপর গত ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আনা একটি রেজ্যুলেশন ১২৮-৯ ভোটে পাস হয়। জাতিসংঘ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘অকার্যকর’ উল্লেখ করে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার বড়দিনে সেন্ট পিটারস স্কয়ারে উপস্থিত হাজার হাজার অনুসারীর সামনে রোমান ক্যাথলিকদের নেতা পোপ বলেন, ‘আসুন আমরা প্রার্থনা করি যেন সবপক্ষ আলোচনার মধ্যেমে একটি সমঝোতায় পৌঁছায় এবং ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হয়।’
তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি পথ যেখানে দুই দেশ সমঝোতার মাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানায় থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে।’ পোপ বলেন, ‘আমরা ইহুদিদের মধ্যপ্রাচ্যের সন্তান হিসেবে বিবেচনা করি। যারা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার কারণে ক্রমাগত ভুগছে।’ তিনি বলেন, ‘উৎসবের এই দিনে আসুন আমরা ঈশ্বরের কাছে জেরুজালেম এবং এ গোটা পবিত্র ভূমির শান্তির জন্য প্রার্থনা করি।’
ফিলিস্তিন-ইসরইলের সংঘাতের মূলে আছে জেরুজালেম নিয়ে বিবাদ। ইসরাইল পুরো জেরুজালেমকে তাদের ‘একক রাজধানী’ বলে বিবেচনা করে। অন্যদিকে, ১৯৬৭ সালে আরব যুদ্ধের পর দখল হয়ে যাওয়া পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়। একই সঙ্গে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত জেরুজালেম। যদিও ইসরাইলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
তবে ১৯৯৩ সালে মার্কিন উদ্যোগে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যা ভেস্তে গেল। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পর ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে সেখানে অন্তত ২ লাখ ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে, যেটি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ