২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৫৫

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

আজ ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এদিনে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের বীর সিপাহী ও জনতা সংঘটিত করেছিল ঐতিহাসিক বিপ্লব। আর সে বিপ্লব সফল করতে সৃষ্টি হয় সিপাহী জনতার অভূতপূর্ব সংহতি। দিবসটি উপলক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে বিভিন্ন কর্ণার থেকে চলতে থাকে নানা ষড়যন্ত্র। সেনাবাহিনীর মধ্যে ছড়ানো হয় বিভ্রান্তি। বিভক্ত করা হয় তাদেরকে। ২ নভেম্বর মধ্যরাতে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করেন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদকে। সেনা প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে পদচ্যুত ও গৃহবন্দী করা হয়। বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নিজেকে নয়া সেনা প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।
পাশপাশি চলতে থাকে গোপন ষড়যন্ত্র। সেনা ছাউনিতে বিভক্তি-বিভ্রান্তি, জনমনে অজানা আতংক সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার গোপন নীল নকশা তৈরি হয়। নিকট প্রতিবেশি দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা এ নীল নকশা করছেন-১৫ আগস্টের প্রতিশোধ নিতে বাংলাদেশ আক্রান্ত হতে পারে-এমন কথা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অপরদিকে সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে জনপ্রিয় সেনা প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের বন্দীত্ব বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠতে থাকে সৈনিকরা। যার চুড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে ৭ নভেম্বর। সাধারণ সৈনিকরা বিদ্রোহ করে অফিসারদের হত্যা করতে থাকে। সে সৈনিক বিদ্রোহে সঙ্গীসহ নিহত হন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। তার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যায়।
সাধারণ সৈনিকরা বিপ্লবের প্রথম ধাপেই মুক্ত করে আনে তাদের প্রিয় অধিনায়ক সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানকে। তিনি সেনা বিদ্রোহকে প্রশমিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সৈনিকরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। তিনি দিনের গুমোট পরিবেশ মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। সেনা বাহিনীর ট্যাংকের কামানে মালা পরিয়ে দেয় উৎফুল্ল জনতা। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস। রাজধানীর রাজপথে জনতার গগন বিদারি শ্লোগানের সঙ্গে ট্যাঙ্কের গর্জন মিলে সৃষ্টি করে এক অভূতপূর্ব আবহ। সে আবহ পুনরায় জানান দেয়, বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আধিপত্যবাদী শক্তির নীলনকশার জাল ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে বাংলাদেশ সক্ষম।
মূলত ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর ছিল আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্রে বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের দিন। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যুহ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব খর্ব করার এক হীন চক্রান্ত। আধিপত্যবাদী শক্তির এদেশীয় দালালদের ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়ে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার ভিত স্থাপন করেছিল।
৭নভেম্বর এদেশের মানুষের কাছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন হিসেবে পরিগণিত। আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের দেশকে একটি অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দীর্ঘদিন অনেক চেষ্টা করে আসছে। সীমান্ত হত্যা অভিন্ন নদীর পানি এককভাবে প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক রীতি নীতি উপেক্ষা করে বাঁধ নির্মাণ, ইত্যাদির, মাধ্যমে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে রাখতে সচেষ্ট ওই শক্তি। সে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেয়ার দিন ৭ নভেম্বর।

কোনো কোনো মহল ৭নভেম্বর সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করে আসছে শুরু থেকেই। তারা এ মহান দিনটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে এর ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। বলাই বাহুল্য, ৭ নভেম্বর যাদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়েছে, এদেশে আধিপত্যবাদী শক্তির হুকুমত কায়েম হতে দেয়নি, সে অপশক্তিই এসব অপ-প্রচারে লিপ্ত।
ন্যাক্কারজনক ব্যাপার হলো এবারও জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় নি সরকার। এর মধ্য দিয়ে তারা আরো একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। তবে সমাবেশ করতে না দিলেও জনগণের মনে জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। তবে সমাবেশ করতে না দিলেও জনগণের মনে ৭ নভেম্বরের যে চেতনার শিখা প্রজ্জ্বলিত আছে তা কখনো নির্বাপিত হবে না।

৪২ বছর পরেও ৭ নভেম্বরের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি, কমেনি তার গুরুত্ব। বরং বলা যায়, চলমান প্রেক্ষাপটে এ দিবসটির গুরুত্ব বেড়েছে অনেক। ৭ নভেম্বর আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক, জাতীয় অস্তিত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডত্ব রক্ষায় জাতিকে উজ্জীবিত করার শপথ নেয়ার দিন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ৭ নভেম্বরও থাকবে তার আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে। যুগ যুগ ধরে তা বাংলাদেশী জাতিকে অনুপ্রেরণা জোগাবে আধিপত্যবাদী শক্তি ও তার তল্পিবাহকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে।

প্রকাশ :নভেম্বর ৬, ২০১৭ ৮:৫০ অপরাহ্ণ