শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি:
দুপুর গড়িয়ে বিকেল সূর্য ডুবু ডুবু ভাব ধীরে ধীরে ছোট বড় বৃদ্ধ সকল বয়সী মানুষের পদচারণা বৃদ্ধি পেতে লাগল। সকলে যে যার মত আসছে যেখানে খালি পড়ে আছে সেখানে বসে পড়ছে এবং গল্প শুরু । আবার ছোট ছোট শিশুরা এসে তাদের সঙ্গি সাথি নিয়ে লাফা লাফি ঝাঁপা ঝাঁপি করছে ,নাচছে ,গান গাইছে। যেন সব বয়সী মানুষের এক মিলন মেলা। এটি একবারে অজ পাড়া গাঁেয় এক মনোরম পরিবেশে দেখা মিলবে। জায়গাটি হল সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার ২ নং কাশিমাড়ী ইউনিয়নের নতুন বাজার সংলগ্ন গ্রামের মধ্যে।
পাশে বয়ে যাওয়া জোয়ার ভাটার খাল ঝঁপালী-নওয়াবেঁকী খালের পাড়ে ৯শতক জায়গা ঘিরে গড়ে উঠেছে কৃষি ভিত্তিক এক বিনোদন কেন্দ্র । যার নাম করণ করা হয়েছে “বাগান বিলাস”।
এখানে রয়েছে শতাধিক প্রজাতির বৃক্ষ।যার মধ্যে আছে রকমারী পাতাবাহারী ফুল,ফল,বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ এবং লবন সহিষ্ণু সুন্দরবনের বৃক্ষ। আছে ছোট একটি পরিকল্পিত ঘরে পাখির বাস। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বসার ব্যবস্থা। প্রবেশ পথের পাশে আছে একটি গোল ঘর।যেখানে শিশুরা নৃত্য করে ,বয়স্করা অধিক রাত পর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া ছবি,ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলি বড় পর্দার মাধ্যমে দেখেন। আছে দুটি দোলনা। শুধু শিশু,বয়স্ক বা মধ্য বয়সী নয় গ্রামের গৃহ বধুরাও এসে বিকালে পরিবারের কাজ শেষ করে একটু বিনোদনের জন্য ঘুরে যান। এখানে সকালে শিশুদের শিক্ষা দান করা হয়। আবার মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ছোট বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেমন জন্মদিন পালন। গ্রামের ছোট ছোট শালিসও বসে এখানে।
সরজমিনে শুক্রবার বিকালে পরিদর্শন কালে বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আঃ ছাত্তার কারিগর,আঃ খালেক কারিগর,আব্দুল আজিজ কারিগর,আবু বকর সরদার বলেন বাগান বিলাসের কারণে বিকালে সময় কাটাতে পারছি। কাশিমাড়ীর বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম,গৃহবধু মনিরা,আমেনা খাতুন,রুপালী পারভীন,খাদিজা পারভীন বলেন বাইরে সময় না কাটিয়ে এখানে বসে আছি, মনটা ভাল লাগে।
শিশু আবু ইছা,সাদিয়া,সুমাইয়া সহ অনেকে বলেন বিকেল হলে মন ছট ফট করে কখন যে বাগান বিলাসে যাব। সকলের সাথে হৈ চৈ করি।
বাগানের বেঞ্চে বসে থাকা স্থানীয় ব্যক্তি আঃ মান্নান,ইমাম তাজ মেহেদী, বাবু,কওছার,ছাত্তার,গৃহবধু মইফুল বিবি,আয়েশা খাতুন আরও অনেকে বলেন এখানে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১/১২টা পর্যন্ত লোকজন বসে থাকে অন্য বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে বসে বসে গান শুনি গল্প করি আবার ভিডিও দেখি। যিনি এটি প্রতিষ্টা করেছেন তার মাধ্যমে বা সহায়তায় বড় পর্দায় ভাল ভাল শিক্ষণীয় ভিডিও দেখা হয়।
এ কৃষি ভিত্তিক বিনোদোন কেন্দ্রটি যিনি তৈরী করেছেন বা জায়গা দিয়েছেন তিনি হলেন স্থানীয় এক তরুণ সৃজনশীল মেধাবী যুবক মোঃ আসাদ(৩৬)। তিনি পূর্বে এলসিবিসি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। বর্তমানে প্রকল্প শেষ হওয়ায় বাড়ীতে বসে গ্রামের মানুষের বিনোদনের জন্য ও যুবকদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য এটি নিজের অর্থায়নে নির্মান করেছেন বলে জানালেন। এখন তিনি কম্পিউটারে আউট সোসিং এর কাজ করেন। তিনি বলেন এটিকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখছেন ভবিষ্যতে এখানে সামনের পুকুরে একটি স্থায়ী মঞ্চ স্থাপন,বিভিন্ন রকমারী ফুলের চারা স্থাপন,গাছের গায়ে নেম প্লেট স্থাপন,যাদুঘর তৈরী সহ অন্যান্য পরিকল্পনার কথা বলেন।
মোঃ আসাদ বলেন এখানে প্রত্যহ প্রায় এক দেড় কিলোমিটার দুর থেকে লোকজন আসে। যার সংখ্যা শতাধিক। এখানে একটি হাজিরা ও মন্তব্য খাতা রয়েছে। মন্তব্য খাতায় স্বাস্থ্য সহকারী ওবায়দুল ইসলাম এ স্থানকে যুব সমাজের “শান্তির হাট”বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এখানে আসাদের নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপিত সকল স্থাপনা গুলি গ্রামের সকলেই দেখাশুনা করেন। তিনি বলেন বিনোদন কেন্দ্রটি তৈরীর মুল উদ্দেশ্য হল যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করা,পুরানো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা। দেখা যায় গাছের গায়ে ছোট ছোট সাইন বোর্ডে খনার বচন লেখা হয়েছে। তিনি বলেন এখানে শিশুদের সমাবেশের কারণে শিশুরা অনেক অশ্লিল ভাষা পরিহার করেছে।বয়স্করা যেন মুক্ত বাতাস পাচ্ছে।
জানা যায় এ স্থানটিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ অন্যানারা পরিদর্শন করেছেন। কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রউফ বলেন ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরী কৃষি ভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র বাগান বিলাস সত্যি প্রশসংনীয়। অনেকে সরকারী-বেসরকারী সহায়তায় এ ধরনের বিনোদন কেন্দ্র তৈরী করেন।কিন্ত ব্যক্তি উদ্যোগে এলাকার মানুষের বিনোদনের জন্য নির্মিত বাগান বিলাস কেন্দ্রটি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন ইউপি থেকে সকল ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে যাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর