২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৫৪

বিশ্বনেতাদের প্রতি খালেদা জিয়ার চিঠি

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিভিন্ন বিশ্বসংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের কাছে জরুরি পত্র পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়া। অর্ধ শতাধিক দেশের সরকার প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। চিঠিতে তিনি রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। চিঠিতে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মিয়ানমারে চলমান দমন-পীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। রোহিঙ্গাদের চিরতরে নির্মূলের এ নৃশংসতার সাথে জড়িতদের কেন শাস্তির আওতায় আনা হবে না সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি। বিএনপি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ স্থায়ী পরিষদের সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওআইসির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বরাবরে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নৃশংস দমন-পীড়ন বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা নির্ধারণে জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘের অধীনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেগম জিয়া তার চিঠিতে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত গণহত্যা রক্ষা মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রহীনতার ইতি ঘটাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর সম্ভাব্য সব ধরনের চাপ সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের এক ভয়ংকর চলমান নৃশংসতার প্রেক্ষাপটে বিএনপি চেয়ারপার্সনের এ চিঠি অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি শুধু একটি রাজনৈতিক দলেরই প্রধান নন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। তিনি সরকার প্রধান থাকা অবস্থায়ও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যা তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করেছিলেন। তিনি এটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, মিয়ানমারের এ ঘটনাবলীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির ওপর পড়বে। যে কয়েক লাখ শরণার্থী নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তারা আমাদের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বেগম খালেদা জিয়া বোধকরি সেজন্যই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কেননা, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের দেশে ফেরত না গেলে বাংলাদেশেও নেমে আসতে পারে সামাজিক বিপর্যয়। সরকারের বাইরে থাকা একটি দলের নেত্রী হিসেবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে চুপ করেও থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে এ বিষয়ে তার দায়িত্বশীলতার পরিচয় আবারো দিলেন। একজন রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী সরকারের থাকুন বা না থাকুন, দেশ, জাতি এবং মানবতার প্রতি তার যে দায়িত্ব রয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার চিঠিই তার বড় উদাহরণ। তিনি আবারও প্রমাণ করলেন তিনি দেশনেত্রী, তিনি মানুষের নেত্রী, মানবতার নেত্রী।
আমরা আশা করবো জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব সংস্থা ও বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সরকার বেগম খালেদা জিয়ার চিঠির গুরুত্ব অনুধাবন করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ এবং নিজ মাতৃভূমিতে রোহিঙ্গারা যাতে দ্রুত ফিরে যেতে পারে সে জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
একটি মানবিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

 

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭ ২:৩০ অপরাহ্ণ