নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাদা রঙের ঝকঝকে বাড়িটি অবাক করে দেয় দর্শনার্থীকে। এ বাড়িটির কাঠামোগত সৌন্দর্য দর্শকদের মনে জাগায় বিস্ময়। বাড়িটির স্থাপত্যশৈলী যে কাউকে দেবে চমকে। বন্দরনগরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় গেলে যে কারো চোখে পড়বে বাড়িটি। নাম নূরমহল।
রাজপ্রাসাদতুল্য এই বাড়ির মালিক সালামত আলী বাবুল। জমিকেন্দ্রিক ব্যবসার মাধ্যমেই সালামত আলী বাবুল এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামে প্রচুর জমির মালিক তিনি। বাবুলের আরেকটি বড় পরিচয় আছে; তিনি হলেন ভারতের কারাগারে বন্দি সাজ্জাদ আলী খানের বড় ভাই। র্যাব-পুলিশের করা শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম রয়েছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের। নূরমহলের স্থাপত্যশৈলী সবাইকে ঘোরের মধ্যে ফেলে। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এই ধরনের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় আট একর জমির ওপর নির্মিত বাড়িটি। তিনতলার এই বাড়ি যেন শিল্পীর রং-তুলিতে আঁকা একটি ছবি। জনশ্রুতি আছে, এতে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। এই অট্টালিকার চার কোণে রয়েছে চারটি গম্বুজ। মাঝখানে রয়েছে বিশালাকৃতির একটি গম্বুজ। প্রবেশমুখে রয়েছে দুই স্তরবিশিষ্ট সীমানাপ্রাচীর। প্রথম সীমানাপ্রাচীর পার হয়ে যেতে হয় মূল গেটে; এই পথের পুরোটা যেতে হবে দৃষ্টিনন্দন একটি সেতুর ওপর দিয়ে। সেতুর নিচে মোটামুটি লম্বা ধাঁচের কৃত্রিম লেক। লোহার তৈরি নৌকায় চড়ার ব্যবস্থা আছে এতে।
মূল গেট পার হতেই সড়কের দুই পাশেই চোখে পড়বে দুটি ‘ঘোড়ার মূর্তি’। বাড়ির সামনের অংশে সবুজের ছড়াছড়ি। গাছগাছালি-পাখপাখালিÑকোনো কিছুরই কমতি নেই সেখানে। নূরমহলের প্রবেশপথের ডানপাশে রয়েছে একটি বর্গাকৃতির চমৎকার পুকুর। বামে রয়েছে ব্যাডমিন্টনের স্থান। বিলাসবহুল ভবনটির অবস্থান বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রূপনগর আবাসিকের এক নম্বর সড়কে। শুক্রবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মিষ্টি রোদ পড়েছে ‘নূরমহলের’ গায়ে। অপার সৌন্দর্য নিয়ে রাজসিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন দর্শনার্থীরা। নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলছেন অনেকেই। নূরমহলের বাইরে ভিড় থাকলেও ভেতরে ভিড় নেই। কারণ অনুমতি ছাড়া ওই ভবনে প্রবেশই করা যায় না।
নূরমহলের ভেতরে তোলা কিছু ছবি দেখে বোঝা যায়, বাড়ির ভেতরটা সাজিয়ে তোলা হয়েছে এশীয় ও ইউরোপীয় নানান আকর্ষণীয় উপাদানে। কাচে মোড়া এই বাসার আনাচে-কানাচে শোভা পাচ্ছে দেশ-বিদেশের নানান ঘর সাজানোর জিনিস। ছাদে আছে সুইমিং পুল। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রয়েছে সুবিশাল হলরুম। রাতে নানান রঙিন বাতিতে নূরমহলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা।
রূপনগর আবাসিক এলাকার একাধিক বাসিন্দার মতে, ২০১৬ সালের শুরুতে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। নূরমহল তৈরির জন্য সিলেট থেকে আনা হয়েছিল শ্রমিক। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিলেটের বিলাসবহুল ‘কাজী ক্যাসেল’ আর চট্টগ্রামের ‘নূরমহল’ একই ধাঁচের অট্টালিকা। কাজী ক্যাসেলে হেলিপ্যাড আছে। কিন্তু গম্বুজের কারণে নূরমহলে হেলিপ্যাড নেই। দুই অট্টালিকার মধ্যে পার্থক্য নাকি এতটুকুই। নূরমহলের মালিক বাবুলের দৃশ্যমান আয়ের উৎস জমি বেচাকেনা। রূপনগর আবাসিক এলাকা, শাহজালাল আবাসিক এলাকা, গাউছিয়া আবাসিক এলাকা, গণি কলোনিসহ অন্তত ১১টি আবাসিক এলাকার বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে সালামত আলী বাবুলের। এসব আবাসিক এলাকা থেকে কেউ একবার জমি কিনলে অন্য কাউকে বিক্রি করতে পারেন না; বিক্রি করতে হলে অনুমতি নিতে হয় বাবুলের কাছ থেকে। এ-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড প্রকাশ্যে স্থাপন করেছেন বাবুল; যা রূপনগর আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে। কেউ জমি বিক্রির অনুমতি নিতে গেলেই বাবুলই তার নির্ধারণ করা দামে জমি কিনে নেন। জমি কেনাবেচা নিয়ে এ ধরনের বহু অভিযোগ আছে বাবুলের বিরুদ্ধে। তবে ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে অভিযোগ করা বা পুলিশের কাছে জানানোর সাহস পান না বাবুলের দাপটে। নূরমহলের ব্যাপারে তথ্য নিতে সেখানে গিয়ে সালামত আলী বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার বিকেলে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়; প্রথমবার রিসিভ করে কথা না বলে কেটে দেন তিনি। এরপর আরো চারবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি বাবুল।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ