ধর্ম ডেস্ক :
পবিত্র কুরআনুল কারিম মানুষের জন্য মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশক। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজিজাগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ মুজিজা। বিশ্ব মানবতার দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের মুক্তির মহাসনদ।
কুরআনের দিক-নির্দেশনায় জীবন পরিচালনার মানেই হলো দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করা। এ কুরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার কারণেই আইয়ামে জাহেলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের মানুষগুলো সফল ও সোনালী জীবন লাভ করেছিল। দুনিয়াতেই তাঁরা পেয়েছিল জান্নাতের সুনিশ্চিত গ্যারান্টি। পবিত্র কুরআনুল কারিম যে কারণে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ দিক-নির্দেশনা গ্রন্থ হিসেবে নাজিল হয়েছে; তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো-
সঠিক পথ-নির্দেশনা
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদের ঘোষণা নিয়েই এসেছে। যুগে যুগে দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতেই মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেন।
সমস্যার সমাধান
বিশ্ব মানবতা যখন চরম সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত, যখন বিশ্ব মানবতা আশা করছিল ওপরের ফয়সালা, ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা সব সমস্যার সমাধানকল্পে আলোকবর্তিকা রূপে কুরআনুল কারিম নাজিল করেন।
সতর্কতা বার্তা
কুরআনুল কারিম বিশ্ব মানবতার কল্যাণে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ সতর্কবাতা। এ গ্রন্থে তিনি প্রথমে সব নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অতীতের হটকারী জাতিগুলোর ভূলের শোচণীয় পরিণামসমুহ উল্লেখের মাধ্যমের মানব সমাজ তথা মুসলিম উম্মাহকে সতর্কতা প্রদান করেছেন।
ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন
ইসলামপূর্ব আরব সমাজের লোকেরা বিভিন্ন ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করত। তারা নিজেদের মন মতো বিধান তৈরি করে জীবন অতিবাহিত করত। তারা ছিল চরম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তাদের সে ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা খণ্ডনের সমুচিত জবাব এবং তা দূরকরণের জন্য সর্বোত্তম সমাধান রয়েছে এ পবিত্র গ্রন্থে।
ইসলামী সমাজের রূপরেখা প্রণয়ন
দুনিয়ার সব মানব রচিত মতাদর্শকে উৎখাত করে ইসলামী সমাজের বাস্তব রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে এ পবিত্র গ্রন্থে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
শিরকমুক্ত সমাজ গঠন
আল-কুরআন নাজিলের পুর্বে মানবতা ছিল জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত। শিরক, কুফর আর নিফাকের ভয়াবহ ছোবলে সয়লাব ছিল মানব সমাজ। পবিত্র কুরআনের ঐশী বাণীই বিশ্ববাসীকে এ সব মুনকার তথা অন্যায় কাজ থেকে মুক্ত করে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ-নির্দেশ প্রদান করে।
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা
সমাজের সর্বস্তরে যখন অন্যায়, জুলম-অত্যাচার, মানবাধিকার লংঘনে বিশ্বমানবতা অস্থির। শান্তির জন্য ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য ত্রাহি ত্রাহি তথা বাঁচাও বাঁচাও আত্ম-চিৎকার করছিল। ঠিক তখনই ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল হয় পবিত্র কুরআনুল কারিম। যার ফলে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনসাফভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা।
রবের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন
দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষের লক্ষ্য থাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধরের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের। যা ছিল প্রতিটি মুমিনেরই একান্ত কামনা। আল-কুরআন এমনই এক গ্রন্থ; যার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে মানুষ দুনিয়া ও পরকালের একচ্ছত্র অধিপতি আমাদের রব আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের রসদ পেয়ে থাকে।
সত্যায়নকারী
বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও সফলতায় সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব হলো আল-কুরআন। এর কিতাবের আগে অনেক আসমানি কিতাব ও অগণিত বার্তাবাহক নবি-রাসুলের আগমন হয়েছিল পৃথিবীতে। কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা পূর্ববর্তী সব নবি-রাসুলসহ আল্লাহ প্রদত্ত সব আসমানি কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করেছে।
তাজকিয়ায়ে নফস অর্জন
সর্বোপরি দুনিয়ার সব কর্মমাণ্ডে বান্দার তাজকিয়ায়ে নফস তথা আত্মপরিশুদ্ধি লাভে এক কার্যকরী টনিক হলো মহাপবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন।
পরিশেষে…
বিশ্ব মানবতা আজ কুরআন নাজিলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে। অথচ কুরআনের বিধান বাস্তবায়নই দুনিয়া ও পরকালে মানুষের শান্তির একমাত্র ঠিকানা।
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাহকে কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের সোনালী সমাজ বিনির্মানে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। কুরআন নাজিলের হক যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ