দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
মিশিগানের শহর হ্যামট্রামিক যার এখনকার নাম বাংলা টাউন। মোটর শিল্পের এক সময়ের রাজধানী ডেট্রোয়েটের পাশের ছোট শহর। ঠিক যেমন ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জ তেমনই একটি শহর হ্যামট্রামিক। সেই শহরের মেয়র পদে প্রথমবার বাংলাদেশি একজন নির্বাচিত হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার। তবে কিছু পরিসংখ্যান এক সমীকরণে আসতে হবে শুধু। ৮ আগস্ট এ শহরে মেয়র নির্বাচনের প্রাইমারিতে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মোহাম্মদ হাসান টিকে গেছেন, বর্তমান মেয়র কারেনের সঙ্গে লড়তে। নভেম্বরের ২ তারিখ বা প্রথম মঙ্গলবার ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে কামরুল হাসান যদি বর্তমান মেয়রকে পরাজিত করতে পারেন তাহলে তিনিই হবেন হ্যামট্রামিকের মেয়র। তার এ সম্ভাবনা প্রবল কেননা, তিনি এর আগে দুই বার নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছিলেন।
সিটি মেয়র নির্বাচনে বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে দু’জন পদপ্রার্থী হন। মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও এএসএম কামাল রহমান। এ ছাড়াও প্রার্থী হন বর্তমান মেয়র কারেন মেজেস্কি ও ক্যাথি গর্ডন।
চূড়ান্ত ফলাফলে বর্তমান মেয়র ১২৫৮ ভোট (৪৩%) ও মোহাম্মদ কামরুল হাসান ৭৯২ ভোট (২৭%) পেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আরেক বাংলাদেশি এএসএম কামাল রহমান ৭৩৬ ভোট (২৭%) পেলেও প্রাথমিকে নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন।
প্রাথমিক ফলাফলে মেয়র পদে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মোহাম্মদ কামরুল হাসান। সবার আশা চূড়ান্ত নির্বাচনে বাংলাদেশি ভোট পেলে মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হ্যামট্রামিক শহরের মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন। তবে সেটা যে সহজ হবে না সে আশঙ্কার কথাই বলছিলেন, সেখানকার ধনাঢ্য একজন মোটর শিল্প উদ্যোক্তা এহসান তাকবীম।
‘আমরা প্রাথমিক লড়াইয়ে জয়ী হয়েছি। চূড়ান্ত ব্যালটে একজন বাংলাদেশির নাম অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। এখন আমাদের লড়াইটা পোলিশ বংশোদ্ভুত মেয়র কারেনের বিরুদ্ধে। আমাদের দুই প্রার্থী কামরুল এবং কামালকে যদি আমরা একই প্লাটফর্মে আনতে পারি, তবেই কেবল সেটা সম্ভব। তবে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন দুই প্রার্থী আর তাদের সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যেটা কাটিয়ে ওঠাই হবে চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি দুই পক্ষকে এক টেবিলে আনতে পারি এবং তাদের সমর্থকদের বোঝাতে পারি যে, আমাদের জয়ের জন্য একত্রিত হতে হবে, তাহলে সহজেই এ শহরের প্রথম মেয়র পদে একজন বাংলাদেশিকে পাবে আমেরিকা’ যোগ করেন তিনি।
হ্যামট্রামিক শহরকে সরকারিভাবে বাংলা টাউন হিসেবে ঘোষণা করেন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর রিক স্নাইডার। এবারের মেয়র নির্বাচনে প্রাথমিকের এ ফলাফল বাংলা টাউন নামকরণের প্রাথমিক পরিপূর্ণতা দিল। তবে এখনও এ নগরে মেয়র একজন পোলিশ বংশোদ্ভুত সাদা আমেরিকান। আগে যখন মোটর শিল্পের সুদিন ছিল তখন পোলিশদের জয়জয়াকার ছিল এখানে। ৯০ এর দশক থেকে বাংলাদেশিরা দলে দলে ওই শহরে গিয়ে তাদের অবস্থান শক্ত করতে থাকে। বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করে একটি মৃতপ্রায় শহরকে কর্মচাঞ্চল্য করে পুরো আমেরিকাকে চমকে দিয়েছে হ্যামট্রামিকের বাংলাদেশি বাসিন্দারা। এখন সেখানে পোলিশ জনগণের সংখ্যা ১০ শতাংশের মতো। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশিরা তবে সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনিদের বড় অংশ বসবাস করে। তাদের ভোট অনেক খানি বাংলাদেশিরা পেতে পারে। যদিও অনেক ইয়েমেনি চাচ্ছেন না এ শহরের নেতৃত্ব সাদা আমেরিকানদের হাত ছাড়া হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন বাসিন্দা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, ‘এ দু’জনকে একত্রিক না করতে পারলে মেয়র পদে কামরুল হাসানের জয়ের সম্ভাবনা কম। কারণ এখনও এককভাবে কারেনের ভোট বেশি। কিন্তু কামাল এবং কামরুলের ভোট একত্রিত করলে আবার সেটা কারেনের চেয়ে অনেক বেশিতে দাঁড়ায়। মনে হচ্ছে, চাইলেই দু’জনকে একত্রিত করা সম্ভব, কিন্তু মাঝে অনেক রকম রাজনীতির চাল আছে।’
এখানে চট্টগ্রামের বাংলাদেশি বনাম সিলেটি বাংলাদেশি নামে দুই ধারায় দুটি ইজম আছে। এক পক্ষ চান না অন্য পক্ষ এগিয়ে যাক। আবার এখানে প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ধারায় ২টি পক্ষ আছে তারা চান না, বিরোধী পক্ষের কেউ জিতুক। যেমন কামরুল আগে বিএনপির রাজনীতির সমর্থক থাকলেও এখন আওয়ামী রাজনীতির পক্ষের লোক হিসেবে পরিচিত। তাই জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির সমর্থকরা চান না তিনি জয়ী হোক। এ সব কারণে এ শহরটির নাম বাংলাটাউন হলেও এখানে মেয়র পদে বাংলাদেশির উঠে আসার সম্ভাবনা যেমন আছে, তার পেছনে শঙ্কাও কম নয়।
এদিকে মঙ্গলবার প্রাইমারি নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে বাংলাদেশের মতোই নির্বাচনী আমেজ পরিলক্ষিত হয়। শহরজুড়েই ছিল উৎসবের আমেজ। পান-সুপারি নিয়ে ভোটারদের আপ্যায়ন করতে দেখা যায় রাস্তার মোড়ে। ভোটার না হলেও অনেক শিশু ও তরুণ প্রার্থীদের নাম ও ছবি সংবলিত টি-শার্ট, ব্যানারসহ হাঁটতে ও লিফলেট বিলি করতে দেখা যায়। নির্বাচনে বাংলাদেশিদের সাফল্যে বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (ব্যাপাক), বাংলাদেশি আমেরিকান বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগানসহ (বাবাম) বাংলাদেশি নেতৃস্থানীয়রা দেশীয় ভোটারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। বিজয়ীদের চূড়ান্ত নির্বাচনে নির্বাচিত করতে অনুরোধ জানান। এ ছাড়া প্রাথমিক নির্বাচনে নির্বাচিতদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ