২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৩২

এইচ এস সি’র ফলাফল

চলতি ২০১৭ সালের এইচ এস সি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৩ জুলাই রবিবার। সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে মোট দশটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ১৭০ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮ লাখ ১ হাজার ২৪২ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। জিপিয়ে-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। সে হিসেবে এবারের ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয় । এছাড়া গত দশ বছরে এবারে পাসের হার সর্বনিম¤œ বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে- এবার শত ভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা যেমন কমেছে, বিপরীতে শূন্য পাস করা কলেজের সংখ্যাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এইচ এস সির ফলাফল অনেককেই আশাহত করেছে।
এবারের এইচ এস সি’র ফলাফল দেশবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, গত এক দশকে এ ফলাফল সর্বনি¤œ হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে লেখাপড়া ঠিক মত হচ্ছে না। যার প্রতিফলন ঘটেছে ফলাফলে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করায় সার্বিকভাবে পাশের হার কমেছে। তিনি এও বলেছেন, পাশের হার কম হলেও এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন রোধে বোর্ড সমূহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এটা শিক্ষাকে আরো উন্নত করার পথ।
জনমনে প্রশ্ন, এবার যদি সঠিক পদ্ধতিতে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে, তাহলে আগের বছরগুলোতে কি বেঠিক পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছিল ? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে ওই বেঠিক মূল্যায়নের কারণে ভাল পরীক্ষা না দিয়েও যারা কৃতিত্ব সহকারে পাশের সনদ পেয়ে গেছে তারা কি জাতির ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাড়াবে না ? তাছাড়া পরীক্ষা পদ্ধতি উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে যদি এভাবে বছরের পর বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতেই থাকে তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? আর শিক্ষার্থীরা এভাবে কতদিন গিনিপিগ হতে থাকবে? সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি স্থায়ী পরীক্ষা ও খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকা দরকার বলে শিক্ষা সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন।
শিক্ষা সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন যে, খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি এদিক সেদিক করে শিক্ষার্থীদের পাসের হার বাড়িয়ে দিয়ে হয়তো সাময়িক বাহবা সরকার নিতে পারে। শিক্ষার হার মান বৃদ্ধির নিদর্শনা হিসেবে তা প্রদর্শন করে সস্তা প্রশংসাও নিতে পারে। কিন্তু পরিনামে তা জাতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না। কেননা, গত কয়েক বছরে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণের হার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, শিক্ষার মান বৃদ্ধির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নমনীয়ভাবে খাতা মূল্যায়নের মাধ্যমে পাশের হার বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কেন জন্ম নিয়েছিল সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাদের এ প্রবণতা এক সর্বনাশা ধারা সৃষ্টি করেছে একথা বলা নিশ্চয়ই অতিশয়োক্তি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় যখন মাত্র দুইজন উত্তীর্ণ হয় তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না শিক্ষার মান কতোটা উন্নতি লাভ করেছে।
দেশের শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা সচেতন ব্যক্তিরা এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা পাশের হার নয়, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে মেধাবী ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক মন্ডলীর প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করা যাবে না। বলা যায় অযোগ্য শিক্ষকের আধিক্যই আমাদের শিক্ষার গুণগত মান কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। শিক্ষক নিয়োগে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী, উৎকোচ দান পদ্ধতি-মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের মনে প্রধান বাধা। মনে রাখা দরকার, যারা শিক্ষার্থীদের পড়াবেন, তারাই যদি উপযুক্ত না হন, পর্যাপ্ত জ্ঞান যদি তাদের না থাকে, তাহলে তারা শেখাবেন কীভাবে? শিক্ষারমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কোচিং ব্যবসা, গাইড বই বন্ধসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়ার কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসব বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত নেই।
শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড। তবে সে শিক্ষা হতে হবে প্রকৃত শিক্ষা। যা গ্রহণ করে একজন শিক্ষার্থী সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। পাসের হার কম হলে হতোদ্যম হওয়ার যেমন কারণ নেই, তেমনি বেশি হলেও উচ্ছসিত হওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, সার্টিফিকেট নয়, গুরুত্ব দিতে হবে মেধার বিকাশ এবং জ্ঞানার্জনের ওপর। সুতরাং এবারের এইচএসসির ফলাফলকে যারা বিপর্যয় হিসেবে মনে করছেন তারা যে ভ্রান্তিতে ভুগছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণ হওয়া কম কথা নয়। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, চেষ্টা করলে, তারা আগামীতে ভালো ফল করতে পারবে এটা আমাদের বিশ্বাস।

 

 

প্রকাশ :জুলাই ২৫, ২০১৭ ৫:৩২ অপরাহ্ণ