ধর্ম ডেস্ক:
ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। হজ তার পঞ্চমটি। যা আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ইবাদত। হজ কী ও কেন? এমনকি কোন প্রেক্ষাপটে হজ ফরজ হয়েছে, তা অনেকেরই অজানা। আসুন সংক্ষেপে হজ সম্পর্কে জেনে নিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নির্দেশনা… হজ কী?হজ মানে হচ্ছে সংকল্প করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত হজের মাসের (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) নির্ধারিত দিনসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত বাইতুল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহের জিয়ারত ও বিশেষ কার্যাদি সম্পাদন করাই হচ্ছে হজ।
ইসলামের ইতিহাসে হজের ইতিহাস অতি প্রাচীন এবং এর প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল, স্মৃতিবিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ। আর তাহলো-
>> হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানোর পর তাঁরা উভয়ে পৃথিবীতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। একে অপরকে ব্যকুল হয়ে খুঁজতে থাকেন।
আল্লাহ তাআলার অসীম রহমতে তাঁরা উভয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার স্থান আরাফাতের ময়দানে পরস্পর মিলিত হন। তাদের এ মিলন স্থলকে আল্লাহ তাআলা সারা পৃথিবীর সামথ্যবান মানুষের জন্য প্রতি বছরই মহামিলন প্রান্তর হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
মানুষ হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালনে প্রতি বছর ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে রোনাজারি, কান্নাকাটি করে তাদের হৃদয় ও মন দিয়ে আল্লাহকে উপলব্দি করার প্রাণপণ চেষ্টা সাধনায় নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেন। আর এ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানই হজের মূল রুকন।
>> আজ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে সংঘটিত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরা এবং তাঁদের পুণ্যবান সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর দ্বারা প্রচলিত সাফা-মারওয়ায় সাঈ, মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এবং কুরবানি সম্পাদনও হজের রুকন।
হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সব যুগের আল্লাহ প্রেমিক বনি আদম পরম ব্যকুলতায়, আবেগ ও মায়ামমতায় আল্লাহর ঘরে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় হজ ও জিয়ারাতের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত প্রেক্ষাপট।
হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয় মাওলার প্রেমের নিদর্শন হজ। যা পর্যায়ক্রমে সব নবি রাসুলগণই বাইতুল্লাহ জিয়ারত ও তাওয়াফ করেন। যে ধারা আজও প্রচলিত।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বাইতুল্লাহ পুনঃর্নিমাণের পর হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম এই ঘরকে তাওয়াফ ও হজ করার জন্য হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে বলেন।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এ নির্দেশ পেয়ে ছেলে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে নিয়ে তিনি বাইতুল্লাহ তাওয়াফসহ হজের যাবতীয় কার্মকাণ্ড সম্পন্ন করেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা গোটা দুনিয়ার মানুষের জন্য হজের ঘোষনা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। যা কুরআনে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
‘এবং মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীনকায় উষ্ট্রের পিঠে, তারা আসবে দূরদূরান্তের পথ অতিক্রম করে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৭)
অতঃপর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে একটি উঁচু স্থানে ওঠে চতুর্থদিকে ফিরে হজের ঘোষণা প্রদান করেন। যা কুরআনে এভাবে এসেছে-
‘হে লোকসব! বাইতুল্লাহ-এর হজ তোমাদের ওপর ফজর করা হয়েছে। তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও।’
হজরত ইবারাহিম আলাইহিস সালামের এ আহবানে সাড়া দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম দিগন্তে যাদের হজ নসিব হয়েছে, তারা- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; হাজির হে আল্লাহ! আমার সবাই উপস্থিত; সাড়া দিয়েছে। যার যতবার সৌভাগ্য হয়েছে, সে ততবার হজ পালনে সাড়া দিয়েছে।
এভাবেই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পর যে সব নবি-রাসুলের আগমন ঘটেছে, তাদের সবাই বাইতুল্লাহ জিয়ারত করেছেন এবং হজ পালন করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য হজ ফরজের ঘোষণা প্রদান করেন বলেন-
‘মানুষের মধ্যে যাদের সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তাদের জন্য আবশ্যক কর্তব্য।’ (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৯৭)
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ