২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:১৮

শিল্পী আব্দুল জব্বারের পাশে দাঁড়াল ওয়ালটন

বিনোদন প্রতিবেদক:

কণ্ঠে তার পরিচয়। এক সময়ের অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি, যেগুলো পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি হয়ে ওঠেন শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী। ‘ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া’ গানের সেই শিল্পী আব্দুল জব্বার আজ আর গলা ছেড়ে গাইতে পারেন না।

সময়ের পরিক্রমায় আজ তিনি হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। তার কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না। হৃদরোগও শিল্পীর হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে। ফলে তিনি এখন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই কালজয়ী শিল্পীর উন্নত চিকিৎসার জন্য আনুমানিক ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু শিল্পী এবং তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সেখানে তিনি চিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছিলেন।  বলেছিলেন তার শিল্পী জীবনের মর্মস্পর্শী কিছু কথা। সংবাদটি প্রকাশের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইলস, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও টেলিকমিউনিকেশন পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপ শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা বিষয়টিকে সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করে।

এক সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই শিল্পীর গান প্রচারিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে শিল্পী আব্দুল জব্বার রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলা চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হয়েছে তার গানে। সেকথা স্মরণে রেখে আজ ৩ জুন ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে অসুস্থ শিল্পী আব্দুল জব্বারের হাতে অর্থ সহায়তার চেক তুলে দেওয়া হয়। কণ্ঠযোদ্ধা এই শিল্পীর হাতে চেক তুলে দেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড এডমিন) এস এম জাহিদ হাসান, ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফিরোজ আলম। এ সময়  রাইজিংবিডির ফিচার সম্পাদক তাপস রায় উপস্থিত ছিলেন। এস এম জাহিদ হাসান আব্দুল জব্বারের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেয়াসহ সংগীতাঙ্গনে শিল্পীর অবদানের কথা তুলে ধরেন। এ সময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে আব্দুল জব্বার ওয়ালটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শিল্পীর মেয়ে টুনটুন জানান, তার বাবার কিডনির অবস্থা ভালো নয়, হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া কোমরে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। শিল্পীর চিকিৎসার জন্য শিগগিরই মেডিক্যাল বোর্ড বসবে। সেখান থেকে চিকিৎসকদের মতামত জানার পর  চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেই দুঃসময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই শিল্পীর গাওয়া বিভিন্ন গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসংগীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ টাকা তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

আব্দুল জব্বার স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত হয়েছেন। তার ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান রয়েছে।

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

প্রকাশ :জুন ১৫, ২০১৭ ৪:৪৪ অপরাহ্ণ