২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৩৩

আরও বাড়বে বৃষ্টি ও বজ্রপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গতকাল বুধবার সারা দেশে প্রায় ৩০ জন মারা গেছে বজ্রপাতে। এবার এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে শতাধিক মানুষের। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী শনিবারের (১২ মে) পর আরও বাড়তে পারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত।

কালবৈশাখীর সময় বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে বৃষ্টি ও বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বজ্রপাতের প্রবণতা ও তাতে প্রাণহানির ঘটনা অনেক বেশি। আবহাওয়াবিদরা একে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, অন্যান্য বছর কালবৈশাখীর মেঘ উৎপন্ন হতো বাংলাদেশ থেকে ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এ বছর কালবৈশাখীর মেঘ  তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে। আর এ কারণে এ বছর বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি মনে হচ্ছে।

আবহাওয়া বিশেষ করে অস্বাভাবিক বজ্রপাতের ঘটনা নিয়ে বুধবার সঙ্গে কথা হয় আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ, আবদুল হান্নান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তারা সবাই এবারের বজ্রপাতের আধিক্যকে ব্যতিক্রমী বলছেন। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘এ বছর বজ্রপাতের ঘটনা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কালবৈশাখীর মেঘগুলো রাজশাহীর ওই দিকে তৈরি হচ্ছে এবং তা সেন্ট্রাল পয়েন্ট দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য ঢাকায় বজ্রপাত বেশি মনে হচ্ছে।’

বজলুর রশিদ বলেন, ‘বজ্রপাতের কাউন্টিং ছিল না। তবে স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণে এই পরিমাণ বেশিই মনে হচ্ছে। কাল-পরশু প্রবণতা কম থাকলেও ১২ মের পর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে ‘ অতীতের তুলনায় এখন বজ্রপাতের ইভেন্ট বেড়ে গেছে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, একটি সিস্টেম গড়ে ওঠার পর শেষ পর্য ন্ত সেটাকে একটি ইভেন্ট বলা হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত ২০টির মতো ইভেন্ট হয়েছে, সেটা অস্বাভাবিক। ৩০ মার্চ থেকে এখন পর‌্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এটি হয়ে যাচ্ছে। পরপর তিন-চার দিনও হয়েছে, সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বছর বেশির ভাগ সিস্টেম ডেভেলপ হয়েছে দেশের উত্তর পশ্চিমে এবং তা দেশের মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে শেষ হয়েছে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ মান্নান বলেন,  ‘অন্যান্য বছর এখানে এমনটি হতো না। বাংলাদেশ থেকে ১৫০-২০০ কিলোমিটার দূরে ভারতে সিস্টেম ডেভেলপ হতো এবং তা রংপুর, দিনাজপুরের দিকে শেষ হয়ে যেত।’ মান্নান বলেন, ‘এবার ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। এবার উৎপন্ন হয়েছে বাংলাদেশে এবং বিস্তৃত হয়েছে পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত। এ জন্য ঢাকায় এবার বজ্রপাত বেশি মনে হচ্ছে।

এ আবহাওয়াবিদ বলেন, এ বছর বজ্রপাতের শব্দও তুলনামূলক বেশি, সেটাও ব্যতিক্রম।  এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে জলীয় বাষ্পের জোগান বেশি। এ কারণে চার্জ বেশি হচ্ছে, তাতে বজ্রপাতের শব্দ জোরালো  হচ্ছে। আগামী পাঁচ-ছয় দিন দেশের রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেশি থাকবে বরে জানান মান্নান।  তবে অন্য অঞ্চলগুলোতে এ প্রবণতা একটু কম থাকবে।

বজ্রপাত বাড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কিছুটা থাকতে পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম। অধ্যাপক শহিদুল বলেন, ‘আামাদের জলবায়ু ব্যবস্থায় মূলত শীত ও বর্ষা দুটি স্পষ্ট ঋতু। মাঝখানে ট্রানসেকশন পিরিয়ডে ভূমিতে হিমালয়ের পাদদেশে, রংপুর দিনাজপুর রাজশাহী টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ ও সিলেটের দিকে লোকাল ডিপ্রেশন হয়। এটা পূরণ করার জন্য কালবৈশাখী ঝড় হয়।

অনেক সময় ভূমির ব্যবহারের কারণেও জলবায়ু পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ সময়টায় শিলাবৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। মানুষের অসচেতনতার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান অধ্যাপক শহিদুল। আগে বড় বড় গাছপালা ছিল। সেসব কেটে ফেলা হয়েছে। মাঠে যে কৃষক কাজ করেন তার আশপাশে বড় কোনো গাছ নেই বলে বজ্রপাত তার দিকে আকর্ষিত হয়।

এ ছাড়া মানুষের বদলে যাওয়া জীবনযাপন, নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও ভূমি ব্যবহার বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের অধিক ব্যবহার বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কিংবা প্রাণহানির একটি বড় কারণ বলে মনে করেন এই পরিবেশবিদ। এদিকে দিনের প্রাত্যহিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল নয়টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ১০, ২০১৮ ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ