বিনোদন ডেস্ক:
উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকার নাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে মেধা, যোগ্যতার পাশাপাশি সুপারস্টার হওয়াটাকে ভাগ্যেরও খেলা বলে মনে করা হয়। অনেকেই মেধা ও যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না। সেই প্রমাণ বলিউড-টালিউডের মতো ঢাকাই ছবির ইন্ডাস্ট্রিতেও কম নয়।
দিনের পর দিন চমৎকার সব চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তারকা খ্যাতিও পান। কিন্তু সময়ের স্রোত তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্মৃতির অতলে। কিংবা টিকে থাকেন নিভৃতে-নিরবে। আবার অনেকেই অল্প কিছু কাজ দিয়েও অমরত্ব পেয়ে যান, টিকে থাকেন চিরসবুজ হয়ে ভক্ত হৃদয়ে। জসীম, জাফর ইকবাল, সালমান শাহ- সেই তালিকার সেরা নাম।
তারকাদের নাম পরিবর্তনে ‘মাস্টার’ ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এহতেশাম। তাকে নাম পরিবর্তনের লক্ষী মানুষ মনে করা হতো। কারণ যে কয়জন তারকার নাম তিনি বদলে নিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবাই পরবর্তীতে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন, হয়ে আছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের মহা নক্ষত্র। শাবানা, শবনম, শাবনূর- তার সাক্ষী দিয়ে চলেছেন।
কোনো এক অদ্ভুত কারণে নারী তারকাদের ফিল্মি নাম দেয়ার ক্ষেত্রে ‘শ’ অক্ষরটির প্রতি দুর্বল ছিলেন নির্মাতা এহতেশাম। নিজের আবিষ্কার করা নারী শিল্পীদের এই অক্ষর দিয়ে নামকরণ করতেন তিনি। আর পুরুষ শিল্পীদের জন্য তার অক্ষর ছিল ‘ন’। যেমন- নাদিম, নাঈম।
এর বাইরেও অনেক নাম পরিবর্তন হয়েছে। যেমন অমর নায়ক সালমান শাহ নিজেই নিজের নাম বদলে রেখেছিলেন স্ত্রী সামিরার সঙ্গে পরামর্শ করেন। সামিরা বলেন, ‘সালমানের নাম ছিলো ইমন। সে সালমান খানের স্টাইল পছন্দ করতো। যখন সিনেমা করতে এলো তখন সে শাহরিয়ার ইমন বদলে নাম সালমান রাখলো আর পারিবারিক নামের অংশ থেকে শাহ যোগ করলো।’
নাম বদলেছিলেন নব্বই দশকের আরেক সুপারস্টার চিত্রনায়ক রিয়াজ। তার পারিবারিক নাম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। সেটাকে কাট ছাট করে তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন রিয়াজ নামে।
সময়ের সেরা নায়ক শাকিব খানও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘বলিউডের সালমান খান আমার প্রিয় নায়ক। চলচ্চিত্রে আসার পর তার সঙ্গে মিল রেখে নিজের নাম খুঁজছিলাম। কাছের মানুষের সহায়তায় এক সময় পেয়েও গেলাম। সোহেল রানা থেকে হয়ে গেলাম শাকিব খান।’ বলিউডের ‘খান’ উপাধির প্রভাব দারুণভাবেই পড়েছে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে। সেই প্রভাবে শাকিব খানের মতো মো. স্বপন হয়ে গেলেন আমিন খান, মোহাম্মদ জহিরুল হক হয়েছেন জায়েদ খান। এ রকমই আরেক খান হলেন শাকিল খান।
তবে বলিউডে এক সময় ছিল ‘কুমার কালচার’। পঞ্চাশের দশকে বলিউডে ইউসুফ খান অভিনয়ে এসে হয়ে গেলেন দিলীপ কুমার। তার সাফল্যের প্রভাবে টালিগঞ্জের কেদারনাথ হলেন উত্তম কুমার। এ দেশের চলচ্চিত্রে ওবায়দুল হক হয়েছিলেন কিরণ কুমার।
এছাড়াও ঢাকাই ছবিতে নাম বদলেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। তার পারিবারিক নাম ছিলো আবদুর রাজ্জাক। তিনি সেটাকে ছেটে শুধুমাত্র রাজ্জাক নামটিকেই পরিচিত করে তুলেছিলেন। জনপ্রিয় অভিনেতা আলমগীরের আসল নাম ছিল ‘মহিউদ্দিন আহমেদ’। সোহেল রানার পারিবারিক নাম ছিলো মাসুদ পারভেজ ও রুবেলের মাসুম পারভেজ।
অঞ্জলী ঘোষ থেকে হয়ে গেলেন অঞ্জু ঘোষ। মিনা পাল হয়েছেন কবরী। ফরিদা আক্তার পপি হলেন ববিতা। তবারুক আহমেদ হলেন বুলবুল আহমেদ। আবদুস সামাদ থেকে টেলি সামাদ।
আরও নাম বদলেছিলেন দিতি। তিনি পারভীন সুলতানা থেকে দিতি হয়েছিলেন। আফরোজা সুলতানা রত্না থেকে হয়েছিলেন শাবানা। শাবনূরের পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহার নূপুর। করিমগঞ্জের ইদ্রিস আলী হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। আরিফা জাহান হয়েছেন মৌসুমী আর দিলারা হানিফ রিতা হয়েছেন পূর্ণিমা। অপু বিশ্বাসের পারিবারিক নাম অপু শ্রাবন্তী বিশ্বাস, সাদিকা পারভিন থেকে পপি আর শারমীন আক্তার নিপা সিনেমায় এসে হয়ে গেলেন মাহিয়া মাহি।
ইফতে আরা ডালিয়া হলেন দোয়েল, নাজিম বেগ থেকে নাদিম, ফারহানা আমির রত্না থেকে নূতন, মাহমুদুর রহমান ওসমানী হলেন মাহমুদ কলি, মিজানুর রহমান হলেন মিজু আহমেদ, আসলাম তালুকদার হলেন মান্না, রোজিনার পারিবারিক নাম রওশন আরা রেনু, প্রয়াত রোজী আফসারীর নাম ছিলো শামীম আক্তার, প্রয়াত শওকত আকবরের নাম ছিলো সাইয়েদ আকবর হোসেন।
পাকিস্তান মাতানো চিত্রনায়িকা শবনম। তবে হিন্দুঘরে জন্ম নেয়া এই অভিনেত্রীর পারিবারিক নাম ছিলো নন্দিতা বসাক ঝর্ণা। শর্মিলী আহমেদের পারিবারিক নাম মাজেদা মল্লিক, কোহিনূর আক্তার সিনেমায় এসে হয়ে গেলেন সুচন্দা। সুচরিতার পারিবারিক নাম বেবি হেলেন, সুজাতার তন্দ্রা মজুমদার।
কলকাতার মেয়ে সুনেত্রা অভিনয়ের চমক দেখিয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে। তার পারিবারিক নাম ফাতেমা হক। সুমিতা দেবী ছিলেন হেনা ভট্টাচার্য, সুলতানা জামান ছিলেন মীনা জামান।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ