নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রাজধানীতে মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কার নিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাতভর রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘টানা পার্টি’। ফাঁকা রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ, মোবাইল ফোনসেট, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। এ ছাড়া গুলি করে কিংবা কুপিয়ে আহত করে, এমনকি হত্যা করেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। জখম হলে বা মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাই হলে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করে, যে ঘটনা পরে জানা যায়। এর বাইরে টানা পার্টির ছিনতাইসহ রাতের ছিনতাইয়ের বেশির ভাগ ঘটনাই আড়ালে থেকে যায়। ভুক্তভোগীরা জানায়, রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এবং সাহরির সময় থেকে সকাল পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা থাকে বেশি। প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অন্যান্য বছর ঈদ মৌসুমে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির অপতৎপরতা বাড়লেও এবার এখনো অনেকটা কম রয়েছে। রমজানের ২১ দিনে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৫ জন। বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১২ জন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ার খবর মিলত। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এবার আমাদের তৎপরতার কারণে কোনো অজ্ঞান পার্টি নেই। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছিনতাইকারীদের সংগঠিত হওয়ার আগেই নজরদারির মাধ্যমে তাদের ধরা হচ্ছে। রমজান ও ঈদের সময় বাড়তি নিরাপত্তা দিতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারীচক্র সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে আমরা তৎপর রয়েছি। আগের চেয়ে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে, নিয়মিত চেকপোস্ট বসছে। বিভিন্ন বিপণিবিতানে ও মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। হাসপাতাল, পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে এখন প্রতিদিন অন্তত ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শুধু গুলিবিদ্ধ এবং ছুরিকাহত হলেই ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের পরবর্তী সময়ে হয়রানির ভয়ে ভুক্তভোগীরা মামলা করে না। অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনো দিনে দু-একজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। এবার রমজানে ১৫ জন এভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিনে ব্যাংক ও মার্কেট এলাকায় ছিনতাই ঠেকাতে ব্যাপক নিরাপত্তা নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে রাতে তৎপর হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীচক্রগুলো। রাতে অলিগলিতে স্থানীয় বখাটেরা, বিশেষ করে মাদকসেবীরা ছিনতাই করে। সন্ধ্যার পর ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেলে করে এবং মধ্যরাতে প্রাইভেট কার নিয়ে সক্রিয় হয় টানা পার্টি। পুলিশের দাবি, রমজানে কিছু মৌসুমি ছিনতাইকারী ঢাকায় এসেছে, যারা রাতে ছিনতাই করে দিনে ঢাকার বাইরে চলে যায়। ফলে তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ