নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেনাপোলসহ যশোর ও আশেপাশের জেলার স্বচ্ছল মানুষ এবার ঈদের কেনাকটা করার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন কোলকাতায়। এজন্য বেনাপোল দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াতও বেড়েছে বেশ। চলতি জুন মাসের শুরু থেকে অন্যান্য মাসের তুলনায় পাসপোর্ট যাত্রীদের আনাগোনা ছিল লক্ষণীয়। আর এখন সবাই ফিরছেন ব্যাগ ভর্তি পণ্য নিয়ে। যে কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে মন্দাভাব। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় ভিসা সহজীকরণ হবার কারণে বেনাপোলসহ যশোর ও এর আশেপাশের জেলার মানুষ কোলকাতায় গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করছেন। যে কারণে রোজা ১৯টি পার হলেও আমরা তেমন ক্রেতা পাচ্ছিনা। বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নগরী কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অল্প খরচে-স্বল্প সময়ে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনায়াসে যাওয়া যায়। স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ৩/৪ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। ঈদকে সামনে রেখে এখন প্রতিদিন যাতায়াত করছে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। চলতি মাসের ১৫ দিনে ভারতে যাতায়াত করেছে এক লাখ ৫ হাজার ৭শ’ পাসপোর্ট যাত্রী। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। যাদের সিংহভাগ ঈদের কেনাকাটা করে ফিরছেন। এখন ঈদের কেনাকাটায় যাতায়াত বাড়লেও ক’দিন পর থেকে ঈদ অবকাশ যাপনে এ হার আরও বৃদ্ধি পাবে। ঈদের ছুটিকে ঘিরে এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২৩ জুন থেকে ঈদের টানা ছুটি শুরু হয়ে যাচ্ছে। ফলে ওই সময়ে ভারতে গমনের হার সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে ধারণা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের। গত বছর ঈদের ছুটিকে ঘিরে ১০ দিনে ৫০ হাজার ৬১৬ পাসপোর্ট যাত্রী বেনাপোল-হরিদাসপুর চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করেছিলেন। সে হিসেবে গড়ে সাড়ে ৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছিলেন। এ বার এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সময়ে যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগে না পড়তে হয় সেজন্য বেনাপোল চেকপোস্টে পাসপোর্টের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রস্তুতিও রেখেছেন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে দুর্ভোগে পড়তে হয় ভারতীয় চেকপোস্টে গিয়ে। সেখানে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেখানে ইমিগ্রেশনে ধীরগতির কাজের কারণে সকালের যাত্রীরা দুপুরে ও দুপুরের যাত্রীরা বিকেলে এবং বিকেলের যাত্রীরা রাতে পার হয়েছেন।
বেনাপোল বাজারের অন্যতম কাপড়ের দোকান বায়তুল স্বত্ত্বাধিকারী বিপ্লবুর রহমান বিপ্লব জানান, সব শ্রেণীর মানুষদের জন্য ভিসা সহজীকরণ হবার কারণে স্বচ্ছল মানুষরা ঈদ-পূজার কেনাকাটার জন্য খুব সহজে ভারতের কোলকাতায় চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে তারা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ফিরছেন। এতে করে আমাদের ব্যবসায়ীক মন্দার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।
বেনাপোল বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক ও বাজারের গামেন্টস ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী হাজি মোহাম্মদ উল্লাহ ক্লথ স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল ওয়াহেদ দুদু জানান, আগে ঈদে খুব বেচাকেনা হতো। এখন এলাকার মানুষরা ঈদের কেনাকাটার জন্য কোলকাতায় যাচ্ছেন। সেখান থেকে তারা জামা কাপড় ও জুতা-স্যান্ডেল কিনে আনছেন। এতে করে ছিট কাপড়, গার্মেন্টস এবং জুতা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। তারা ঈদকে সামনে রেখে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করলেও কাঙ্খিত ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না। এতে করে লোকসানে পড়তে হবে এসব ব্যবসায়ীদের। বেনাপোলের রাজ ক্লথ স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল খালেক জানান, দু’টি ঈদ এবং বড় পূজাকে সামনে রেখে আমরা দোকানে পণ্য তুলে থাকি। কিন্তু গত ২-৩ বছর ধরে ব্যবসায়ীক মন্দা যাচ্ছে। চলতি বছরও একই অবস্থা। কোলকাতার শ্রোত ঠেকানো না গেলে সব ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কোলকাতা থেকে পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করছেন। তার মতে, আমাদের জেলা হতে ঢাকা থেকে কোলকতার দূরত্ব কম। যাতায়াত খরচও কম। তাছাড়া বেনাপোল ও যশোরের বাজারে গলাকাটা দাম রাখা হয়। জিন্সের প্যান্ট এখানে ৩ হাজার টাকা হলেও কোলকাতায় ৭শ’ টাকায় পাওয়া যায়। যে জুতা বেনাপোল, নাভারন ও যশোরের ৫-৬ হাজার টাকা, সেটি কোলকাতায় দেড় হাজার রুপিতে পাওয়া যায়। যে কারণে এখান থেকে টুকটাক কেনাকাটা করি। বাকিটা কোলকাতা থেকে। আমাদের এখানে ভালো মানের পোশাক বা জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যায়না। বাধ্য হয়ে কোলকাতায় গিয়ে ঈদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে। বেনাপোল দিয়ে কোলকাতায় যাওয়া অন্যান্য ক্রেতাদেরও মন্তব্য একই রকম। বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর শরিফ জানান, অন্যান্য মাসের তুলনায় চলতি মাসে বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত বেড়েছে। এদের বেশিরভাগ ঈদের শপিং করে ফিরছেন। রমজানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে ৭ হাজার পাসপোর্টযাত্রী প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করছে। ঈদের সময়ে এ সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ সাধারণত ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভারতে ভ্রমণে যাওয়ার আগ্রহ থাকে। এ জন্য ওই সময়ে চেকপোস্টে বাড়তি চাপ থাকে। তবে যাত্রীরা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে পারেন, এজন্য ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ডেস্কের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে যাওয়া এবং আসার প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য ৪টি করে মোট ৮টি ডেস্ক ছিল। এখন তা ৮টি করে মোট ১৬টি করা হয়েছে। এছাড়া গরমে যাত্রীরা যাতে কষ্ট না পান সে জন্য ভবনের মধ্যে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা পাসপোর্ট যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন ওই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ