২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৪১

সাফারি পার্কে নতুন অতিথির আগমন

দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জিরাফ একটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। পার্কের উন্মুক্ত আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে জিরাফ দম্পত্তি আশার গর্ভে এ শাবকের জন্ম দেয়। জন্মেও পর পরই নতুন অতিথির নাম রাখা হয়েছে ভরসা। নতুন অতিথির আগমনে পার্ক এলাকায় আনন্দ বিরাজ করছে।  গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মঙ্গলবার ভোর রাতে প্রথম বারের মত জিরাফ শাবকের জন্ম হলো। শাবক আফ্রিকান সাফারির এপার ওপার ব্যস্ত দুরন্তপনায় জিরাফ শাকবটি। চঞ্চল আর দুরন্তপনায় মায়ের সঙ্গে জঙ্গলের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাবকটি।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে কয়েক দফায় দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে জিরাফগুলো আনা হয় পার্কে। এখন পাঁচটি পুরুষ ও তিনটি নারী জিরাফ রয়েছে। পার্কের অফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে অবাধে বিচরণ করছে জিরাফগুলো। এ বেষ্টনীতে আরো বেশ কিছু আফ্রিকান প্রাণি বসবাস করে। মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে শাবকটি গভীর জঙ্গলের ভিতরে। কয়েকদিন গেলেই দলের মধ্যে ভিড়ে যাবে শাবকসহ মা জিরাফ।

আফ্রিকান সাফারির দায়িত্বে থাকা পার্কের প্রাণি পরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান জানান, আফ্রিকান সাফারি জোনের উত্তর পাশের শালবনের গভীর বনের ভিতরে শাবকটির জন্ম হয়। গাছপালা ভেঙে মা জিরাফটি বাচ্চা প্রসবের একটি স্থান তৈরি করে নেয়। পার্কের আফ্রিকান সাফারিতে, জিরাফের সাথে আরো রয়েছে অরিক্স, ওয়াইলবিস্ট, জেব্রা, গ্যাজেল কমনইলান্দ গভীর অরণ্যে অবাধে বিচরণ করে। এ সব উন্মুক্ত প্রাণি দর্শণার্থীরা সুরক্ষিত গাড়িতে করে খুব কাছ থেকে দেখতে পায়।

তিনি আরো বলেন, পার্কে বিভিন্ন প্রাণির শাবকের আগমনে পার্কের আকর্ষণ ক্রমেই বেড়ে চলছে। জিরাফ শাবক এবারই প্রথম সাফারি পার্কে জন্ম নিল। জিরাফ দৈর্ঘ্যে প্রায় আঠার ফুট লম্বা হয়ে থাকে। জন্মের সময় জিরাফের বাচ্চা প্রায় ৬ ফুট লম্বা হয়। ওজন হয় প্রায় ৫৫- ৬৮ কেজি পর্যন্ত। পার্কে বাচ্চাসহ ৯ টি জিরাফ রয়েছে। তিনটি পুরুষ ও পাঁচটি নারী জিরাফ রয়েছে পার্কে। জিরাফের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা উটের মত পানি না খেয়ে দীর্ঘ দিন কাটিয়ে দিতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে একটানা ৭ দিন পানি না খেলেও এদের কোন সমস্যা হয় না। জিরাফের প্রধান খাদ্য গাছের পাতা। জিরাফ তৃণভোজী প্রাণী। বিশেষ করে অ্যাকাশিয়া গাছের পাতা এদের খুব প্রিয়। যদিও এ গাছ বেশ উঁচু হয়, কিন্তু লম্বা গলার জন্য জিরাফ সহজেই এ গাছের পাতা খেতে পারে।

তিনি জানান, জন্মের পর তার মা জিরাফই বাচ্চাটির সেবা শশ্রুষা করে দাঁড় করিয়ে তুলে। এখন সে মায়ের সাথেই পার্কে ছুটে বেড়াচ্ছে। বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর সে মা জিরাফটি বাচ্চাকে নিয়ে অন্যদের থেকে আলাদাস্থানে অবস্থান নিয়েছে। অন্তত সাত দিন মা জিরাফটি বাচ্চা নিয়ে সেখানে থাকবে। এ সময় অন্য কোন জিরাফকে তার কাছে ভিড়তে দেয় না মা জিরাফ। শাবকটি এখন মায়ের দুধ পান করছে। প্রায় এক বছর পর্যন্ত এরা বাচ্চা মায়ের দুধ পান করে থাকে। একটি নিদিষ্ট সময় পার হলে এবং ফিজিক্যাল অবজারভেশনের পর যখন দেখা যাবে তার অন্য খাবারের প্রতি চাহিদা, তখন সে খাবার দেয়া হবে। বর্তমানে মা জিরাফটিকে সবুজ ঘাস, গাজর, ছোলা, তেঁতুল পাতা, কামরাঙ্গা পাতা, আমলকি গাছের পাতা, ইত্যাদি খেতে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ লোকজন সব সময় মা ও শাবককে প্রতি বিশেষ নজরে রাখছেন।

তিনি আরও জানান, মাদি জিরাফ সাড়ে তিন- চার বছর এবং পুরুষ জিরাফ চার -পাঁচ বছরের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। জিরাফের গর্ভকালী সময় ৪৩০-৪৫০ দিন (প্রায় ১৫মাস)। পার্কের এ মা জিরাফটি ৪৪০ দিনে বাচ্চা প্রসব করেছে। জিরাফ ক্যাভটিবে (আবদ্ধ) ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। প্রাকৃতিক পরিবেশের এরা এর চেয়ে কম বাঁচে। কারণ ক্যাভটিবে তাদের চিকিৎসাসহ পরিচর্যা করা হয়।

অপর প্রাণি পরিদর্শক সরোয়ার হোসেন খান বলেন, শাবকসহ মা জিরাফ বেশ সুস্থ সবল রয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে কাউকে বাচ্চার কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি আমরাও নিরাপদ দুরত্বে থেকে মা জিরাফও শাবকের দেখবাল করছি। তিনি জানান, জিরাফ তিন থেকে পাঁচ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয় । তবে সপ্তাহ খানেক পরে একটু একটু করে মায়ের সাথে ঘ্রাস খাওয়ার চেষ্টা শুরু করবে শাবকটি। জিরাফ ১৪-১৫ মাস গর্ভকালীন সময় পার করে। প্রকৃতিতে ২৫ বছর আর আবদ্ধ জোন (ক্যাপটিবে) ২৮ বছর পযর্ন্ত বেঁচে থাকে জিরাফ। জিরাফ সাধারনত একটি বাচ্চাই প্রসব করে। আফ্রিকার পুবর্, পশ্চিম,মধ্য সাহারা মরুভুমির সাভানা ফরেস্ট অঞ্চলে এদের অবাধ বিচরন রয়েছে।

তিনি জানান জিরাফের গাছের পাতা খুবই পছন্দের খাদ্য, তবে পার্কে ভুট্রা, গাজরসহ ভুট্টার সবুজ ঘ্রাস খেতে দেওয়া হয়। তিনি আরো জানান চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শে আমলকি পাতা, অর্জুন পাতা, কামরাঙ্গা পাতা ও তেতুল পাতা খেতে দেওয়া হচ্ছে। একটি জিরাফ (ফিমেল) ২০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে পারে।

চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য শ্রীপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল জলিল জানান, জিরাফ শাবক জন্মের পর থেকেই বিশেস নজরে রাখা হয়েছ শাবক ও মা জিরাফকে। পার্ক কতৃপক্ষ শাবকের সুস্থ্যতার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (এসিএফ) মো.সাহাবুদ্দীন বলেন, জিরাফ স্তণ্যপায়ী প্রাণী। জিরাফ শাবকটি স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের দুধ পান করছে। জন্ম নেওয়ার পর দিন থেকেই শাবক লাফালাফি, দুরন্তপনায় মেতে রয়েছে গভীর বনের ভিতরে। সাফারি পার্কে এটাই প্রথমবারের মত জিরাফ শাবকের জন্ম হলো। জিরাফ শাবকের জন্মে আরেকটি সাফল্য মিলল পার্কের সকলের আন্তরিকতায়। এ সাফল্য সকলের পরিশ্রমের ফসল।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুন ১৬, ২০১৭ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ