২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:১১

ভাঙতি পয়সা নেই বলে কোটি টাকার বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে-বিদেশের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডশপ ও চেইনশপগুলো খুচরা টাকার সমন্বয়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ‍খুচরা পয়সার লেনদেন নেই এসব ব্র্যান্ডশপ বা চেইনশপগুলোতে। যদিও তাদের অধিকাংশ বিলেই খুচরো টাকার পরিমাণ উল্লেখ থাকে।

রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিসহ অভিজাত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী ব্র্যান্ডশপ বা চেইনশপের খুচরা টাকার ফাঁদে পা দিচ্ছে। এই সমস্যাটি হচ্ছে ক্যাশে লেনদেনের ক্ষেত্রে।

অর্থনীতি বিটের সিনিয়র সাংবাদিক ফরহাদ হুসাইনের করা এক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, দেশে ও বিদেশে সমান পরিচিতি বাংলাদেশের একমাত্র পোশাকব্র্যান্ড থেকে বাচ্চার জন্য ঈদের পোশাক কিনলাম। প্রথমে মানি রিসিটটি ভালো করে খেয়াল করিনি। একটু খেয়াল করে দেখলাম, খুচরা দিতে না পারার জন্য টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। অর্থাৎ দামের শেষে ৬২ পয়সা ছিল তার সাথে ৩৮ পয়সা যোগ করে মূল দামের সাথে এক টাকা যোগ করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই প্রতিষ্ঠান আমার কাছ থেকে ৩৮ পয়সা এমনিতেই নিয়ে নিলো। এখন একটু হিসেব করি আসুন। যদি ওই প্রতিষ্ঠানের একটি আউটলেটে এ ঈদ সামনে রেখে প্রতিদিন ১০ হাজার ট্রানজেকশন হয় এবং গড়ে যদি এসব ট্রানজেকশনের সাথে ৩৮ পয়সা বেশি নেওয়া হয় তাহলে প্রতিদিন ৩ হাজার ৮০০ টাকা এমনিতেই ওই প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ যোগ হচ্ছে। অর্থাৎ মাসে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। যদি দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির ১০০ আউটলেট থাকলে তাহলে শুধু রোজার মাসেই এই প্রতিষ্ঠান ভাঙতি নামক অজুহাতে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকে পেয়ে গেল। যেহেতু ভাঙতি সমস্যা তাই ক্রেতাও কিছু বলতে পারছে না, আর প্রতিষ্ঠানের তো বলার কিছুই নেই।

বুধবার রাজধানীর মগবাজারের প্রথম শ্রেণির একটি ব্রান্ডের কসমেটিক্সের দোকানে বিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট বিল এসেছে ২৭৪০ টাকা। তার সাথে ভ্যাট যোগ হয়েছে ১১৪ টাকা ২০ পয়সা। আর এই ২০ পয়সার সাথে আরো ৮০ পয়সা যোগ করে বিল নেওয়া হয়েছে ২৮৫৫ টাকা। তাহলে ভাঙতি না থাকায় ২০ পয়সা কম না বরং ৮০ পয়সা দোকানদারকে বেশি দিতে হয়েছে শারমিন ইসলামকে।

এ বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিয়ে তার নিজের ক্ষোভ ও আক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘এটি একটি পুরনো ট্রিকস (কৌশল)। এভাবে অনেক অনেক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু সফটওয়ার কোম্পানি এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা মিলে কাজটি করছে।’

প্রতিমন্ত্রী জানান, সারাবিশ্বেই এ ধরনের ক্যাশ মেশিনে ভাঙতি ৫০ পয়সার নিচে হলে তা বাদ দিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে দাম রাখা হয়। আর ৫০ পয়সার উপরে হলে তা ক্রেতার কাছ থেকে সমন্বয় করা হয়। এটা একটা রীতি। কিন্তু আমাদের দেশে এটি না মেনে সব ক্ষেত্রেই ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে।

আব্দুল মান্নান বলেন, আমিও চায় এ বিষয়ে একাধারে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হোক এবং তিনি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে থেকে পদক্ষেপ নিয়ে সুরাহা করার ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

প্রকাশ :জুন ১৫, ২০১৭ ৪:০০ অপরাহ্ণ