২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৩৮

ইবাদত করতে হবে এখলাসের সঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মোমিনের জন্য মাহে রমজান আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে অশেষ রহমত স্বরূপ। রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি বান্দা যত বেশি ইবাদত করবে তত বেশি সওয়াব পাবে। তাই আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত পেতে আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। তবে সব প্রকার ইবাদত, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও নেক কাজ কবুলের জন্য শর্ত হলো, এখলাস। এই এখলাস ছাড়া যে কোনো ইবাদত বা নেক আমল কোনো কাজে আসবে না।

এখলাস অর্থ হচ্ছে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালে মুক্তি পেতে নেক কাজ করা। এক্ষেত্রে অন্য কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে নেক কাজ করা যাবে না। যেমন সাময়িক বা জাগতিক কোনো স্বার্থে কিংবা কোনো গোষ্ঠি, দল, সম্প্রদায়, সংস্থা ও কোনো নেকলোকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নেক কাজ করা যাবে না। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করলে বান্দাও সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। বান্দাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যাবে না।
হযরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন- আল্লাহ এখলাস ও তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত আমল ছাড়া অন্য কোনো আমল কবুল করেন না।’ –(নাসাঈ)। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো মাধ্যমকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা যাবে না।
বস্তুতঃ কোরআন, হাদিস এবং ইসলামী শরীয়ত ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কোনো উসিলা নেই। কোনো নেক ব্যক্তির কবর, আস্তানা, পুরোহিত বা কোনো দরবেশ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হতে পারে না। তাদের কাছ থেকে ইসলামের বিপরীত নয় এ ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। কোরআন ও হাদিসের বর্ণিত পন্থায়ই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও কেবলমাত্র সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে রমজানের রোজা রাখে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ –(বোখারি ও মুসলিম)
এখানে কেবলমাত্র সওয়াবের কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, রোজা রাখতে হবে এখলাসের সঙ্গে। সওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালের মুক্তির নিয়ত ছাড়া রোজা রাখার পেছনে আর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। যেখানে এখলাস ও একনিষ্ঠতা থাকবে সেখানে ‘রিয়া’ বা লোক দেখানোর মনোভাব থাকতে পারবে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো নেক কাজ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না। রমজান আমাদের লোক দেখানোর মনোবৃত্তি দূর করার প্রশিক্ষণ দেয়।
কোনো কোনো ইবাদত অন্য লোক দেখতে পায়। যেমন- নামাজ, জাকাত, হজ্জ, কোরআন পাঠ ইত্যাদি। কিন্তু রোজার বিষয়টি বান্দা ও আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। কেননা, কেউ রোজা রেখে গোপনে কিছু খেলে কিংবা ডুব দিয়ে পানি পান করলে অন্য কেউ হয়তো তা দেখতে পারেন না। কিন্তু রাব্বুল আলামিন ঠিকই দেখেন। সুতরাং একমাত্র আল্লাহর ভয় এবং তার সন্তুষ্টির জন্যই মানুষ রোজা রাখে। সেখানো লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নয়, বরং এখলাসের ভিত্তিতে পুরস্কার লাভ করাই উদ্দেশ্য।
যারা এখলাসের সঙ্গে ইবাদত করেন অর্থ্যাৎ মোখলেস লোকদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তওবা করে, সংশোধন করে, আল্লাহকে মজবুতভাবে আাঁকড়ে ধরে এবং নিজেদের দ্বীনকে এখলাস ও নিষ্ঠাপূর্ণ করে, তারা মোমিনদের সঙ্গে রয়েছে। আল্লাহ শিগগিরই মোমিনদের মহান বিনিময় দান করবেন।’ –(সূরা নিসা)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এখলাসের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর ওপর এখলাস, নামাজ কায়েম ও জাকাতের ওপর দুনিয়া ত্যাগ করে আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট।’ –(ইবনে মাজাহ)
হযরত মোয়াজকে (রা.) যখন মক্কার গভর্ণর করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় তখন মোয়াজ বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের উপদেশ দিন। রাসূল (সা.) বললেন, তোমার দ্বীনকে এখলাসপূর্ণ কর, তাহলে কম আমলও তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’
সাহল বিন আবদুল্লাহ তাসাওরি (রা.) বলেছেন, এলেমের সবটুকুই হচ্ছে দুনিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং আমলের সবটুকু হচ্ছে আখেরাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর এখলাস ছাড়া সব আমল বালুর মতো বাতাসে বিলীন হয়ে যায়।
এ আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, এখলাস ছাড়া কোনো আমল রাব্বুল আলামিনের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই এই মাহে রমজান মাসে এখলাস ও একনিষ্ঠতা অর্জনের প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের সবাইকে মোখলেস হতে হবে। আল্লাহ জাল্লাশানুহু আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। -আমিন।

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

প্রকাশ :জুন ১৩, ২০১৭ ১২:২২ অপরাহ্ণ