২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:০৩

খালেদা জিয়াকে প্রেস ক্লাবে আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণে জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দুই সংগঠনের নেতারা।

সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ ও মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার ও সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এ অভিযোগ করেন।

সাংবাদিক নেতারা বলেন,  জাতীয় প্রেসক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে এর জাতীয় মঞ্চের চরিত্রকে আজ বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে। প্রতি বছর মাহে রমজানে প্রেসক্লাব চত্বরে বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এই ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এটা দীর্ঘদিনেরই একটি রেওয়াজ। এবারও বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ইফতার মাহফিলে অংশ নেয়ার সদয় সম্মতি জানিয়েছেন। আগামী ২১ জুন বুধবার এই ইফতার মাহফিলের তারিখ নির্ধারিত।

তারা বলেন, ইফতার মাহফিলের অনুমতির জন্য রমজানের শুরুতেই আমরা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের মৌখিক সম্মতির পর ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী লিখিত আবেদন করেন। প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এতে অনুমোদন দেন এবং জাহাঙ্গীর আলম প্রধানকে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে সব ধরনের সহযোগিতার কথাও জানান। কিন্তু এর দুই দিন পর  ১০ জুন বিষয়টি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা ঢাকা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ‘নিরাপত্তা’র কারণে খালেদা জিয়াকে প্রেসক্লাব চত্বরে ইফতার মাহফিলে আসতে দেয়া হবে না।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ক্লাব সভাপতি ডিএমপি কমিশনার ও গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান যে, তারা নাকি খালেদা জিয়াকে কোনো প্রকার নিরাপত্তা প্রদান করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। সভায় প্রেসক্লাব সভাপতি আরও জানান, ডিএমপি কমিশনার নিজেই নাকি তাকে ফোন করে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,  ‘রাষ্ট্র যেখানে খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সেখানে আমরা তাকে আসতে দিতে পারি না’। সভায় যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হাসান হাফিজ সভাপতির এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ সভা থেকে ওয়াকআউট করেন।

তারা আরও বলেন, আমরা মনে করি, বর্তমান কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তিকে চরমভাবে নস্যাৎ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ডিএমপি কমিশনারের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়ার প্রেসক্লাবে আগমনে বাধা দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বেগম জিয়া প্রতিদিনই নগরীর কোনো না কোনো স্থানে ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন। কোথাও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হয়নি এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কোথাও বাধা প্রদান করেছে বলে আমাদের জানা নেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় প্রেসক্লাবের অদুরে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ও পুর্বানী হোটেলে যাচ্ছেন এবং নিরাপত্তাজনিত দোহাই কেউ দিচ্ছে না। তাই গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দোহাই দেয়াকে আমরা প্রেসক্লাবের বর্তমান কর্তৃপক্ষের খোড়া অজুহাত বলে মনে করি। প্রেসক্লাবের কাছে কেউ নিরাপত্তা চায় না। সেটা ক্লাবের দায়িত্বও নয়।

সাংবাদিক নেতারা জানান, বর্তমান জাতীয় প্রেসক্লাব যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেই জায়গাটি প্রথম বরাদ্দ দেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের খরচ জাতীয় বাজেট থেকে প্রদানের ব্যবস্থাও করেন তিনি। প্রেসক্লাব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুরও দেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ২০০৪ সালে প্রেসক্লাবের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসক্লাবের পুরো ১.৯৯ একর জমি মাত্র ১ লাখ ১ টাকা মূল্যে ক্লাবের নামে স্থায়ী লিজ (৯৯ বছরের) দলিল করে দেন। প্রেসক্লাব ভবনের সংস্কার ও আধুনিকায়নেও তিনি দুবার অর্থ সহযোগিতা প্রদান করেন। প্রেসক্লাবের চারপাশে যে নিরাপত্তা দেয়াল রয়েছে তা নির্মাণ করে দেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাস। ২০০৪ সালে প্রেসক্লাবের বহুতল মিডিয়া কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুরও দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ তাকেই প্রেসক্লাব চত্বরে আসার ব্যাপারে বাধা প্রদান করা হচ্ছে যা এক ধরনের ধৃষ্টতা এবং নি¤œরুচির পরিচায়ক বলে আমরা মনে করি। গত বছর ক্লাবের দখলদার কমিটি খালেদা জিয়াকে আসতে বাধা প্রদান করেছিল। বর্তমান নির্বাচিত কমিটির কাছ থেকেও এমন আচরণ আমরা কোনোভাবে আশা করিনি।

ইতোপূর্বে প্রেসক্লাবে আমাদের কমিটি দায়িত্ব পালনকালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সরকারে কিংবা বিরোধীদলে থাকাকালে সব সময় প্রেসক্লাবে আসতে পেরেছেন। তাকে কখনই বাধা দেয়া হয়নি। বরং সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব দীর্ঘদীনের একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এখানে যেকোনো গণতান্ত্রিক দলের নেতা নেত্রীদের আসার দ্বার উন্মুক্ত। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা বার বার এই ক্লাবে এসেছেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকদের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু স্বৈরাচার এরশাদের এ ক্লাবে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ পতিত স্বৈরাচার এরশাদকে ক্লাবে আসতে দেয়া হচ্ছে। অথচ খালেদা জিয়াকে বাধা দেয়া হচ্ছে।

 

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

 

প্রকাশ :জুন ১২, ২০১৭ ৩:৩২ অপরাহ্ণ