জীবন সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে মোবাইল ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও এর বিড়ম্বনা কম নয়। অনেকে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আবার অনেক সময় ভুল ডিজিট চাপার কারণে টাকা চলে যাচ্ছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। এমন ঘটলে আপনি কী করবেন?
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে নম্বরে টাকা পাঠিয়েছেন সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা। প্রায়ই এ কথা শোনা যায়- অনেকে বিভিন্ন সময় ভুল নম্বরে টাকা পাঠিয়েছেন কিংবা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রায় ক্ষেত্রেই প্রতারণার শিকার হওয়া গ্রাহক অজ্ঞতার কারণে এমন বিড়ম্বনায় পড়েন বলে জানিয়েছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী অনেকেই জানিয়েছেন, ভুল করে অন্য একজনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গেলে বিকাশ হেল্প সেন্টারে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায় না। তারা নিকটস্থ থানায় জিডি করে জিডির কপি নিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে বিষয়টি পুলিশকে জানালে সহসাই যে প্রতিকার মিলবে এমন ভরসাও নেই।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকা কোতোয়ালি জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল আলম মুজাহিদের সঙ্গে। তিনি একটি উপায় জানান, যার মাধ্যমে প্রেরিত টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনের সাহায্যে টাকা আদান-প্রদানের মাধ্যম ‘বিকাশ’-এ ছড়িয়ে পড়েছে প্রতারণার জাল। সারা দেশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য গ্রাহক নানাভাবে প্রতারণার শিকার হলেও প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না বিকাশ কর্তৃপক্ষ। যদি প্রেরিত টাকা অন্য কোন জায়গায় প্রাপক ট্রান্সফার করে ফেলেন তখন আর কিছু করার থাকে না। প্রাপক টাকা ট্রান্সফার না করলে একটি উপায়ে টাকা ফেরত পেতে পারেন ভুক্তভোগী।’’
তিনি পরামর্শ দেন, ভুল নম্বরে টাকা গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রাপককে ফোন দেবেন না। প্রাপক টাকা উঠানোর আগেই জিডি কপি এবং মেসেজসহ বিকাশ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলে তারা ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট লক করে দেবে এবং তার সঙ্গে কথা বলবে। প্রাপক যদি তখন জানায়- হ্যাঁ, টাকা এসেছে, তখন বিকাশ অফিস থেকেই টাকা স্থানান্তর করে দেবে। আর যদি তিনি নিজের টাকা দাবি করেন, তাহলে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাকে অফিসে এসে অ্যাকাউন্ট ঠিক করে নিতে হবে। পরবর্তী ৬ মাসে যদি তিনি না আসেন, তাহলে প্রেরকের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে। পরবর্তী ৬ মাসে অ্যাকাউন্ট ঠিক না করলে সেটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে এবং প্রেরক আদালতের সাহায্য নিয়ে টাকা তুলে আনতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় বিকাশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে যে কোনো ভুল লেনদেনের দায়িত্ব গ্রাহকের/প্রেরকের (যিনি টাকা পাঠাচ্ছেন)। কারণ লেনদেন করার সময় গ্রাহক নিজেই প্রাপকের মোবাইল নম্বর, টাকার পরিমাণ ও পিন নম্বর দেওয়ার মাধ্যমে টাকা পাঠান। পিন নম্বর দেওয়ার আগে গ্রাহক তার মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে নিজের দেয়া তথ্য (প্রাপকের মোবাইল নম্বর ও টাকার পরিমাণ) দেখতে পান, যাতে টাকা পাঠানোর আগে প্রেরক তথ্যগুলো যাচাই করতে পারেন এবং ভুল হয়ে থাকলে টাকা পাঠানোর নির্দেশ বাতিলও করতে পারেন। এরপরও গ্রাহক ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে, গ্রহণকারীর অনুমতি বা আদালতের নির্দেশনা ছাড়া পাঠানো টাকা প্রেরককে ফেরত দেওয়ার এখতিয়ার বিকাশ-এর নেই।
জাহিদুল ইসলাম পরামর্শ দেন, বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে যে কোনো লেনদেনের সময় প্রাপকের (যাকে টাকা পাঠাচ্ছেন) অ্যাকাউন্ট নম্বর ও টাকার পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে লেনদেন করুন।