ঘটনা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রংপুর অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুল হাইকে একই অফিসের যুগ্ম পরিচালক (জেডি) এস এম আব্দুল বারী অফিসের মধ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে আব্দুল বারীকে সিলেট অফিসে বদলির নির্দেশনা দেয়া হয়। শাস্তিমূলক এই বদলিতে তাকে যোগদানের স্বাভাবিক সময়ও দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-১ এর মহাব্যবস্থাপক কাজী আকতারুল স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় বলা হয়, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে রংপুর অফিসে কর্মরত যুগ্ম পরিচালক এস এম আব্দুল বারীকে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন্স, ২০০৩ এর ১৬ ধারার আওতায় সিলেট অফিসে বদলি করা হলো। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কর্মদিবস শেষে রংপুর অফিস থেকে বিমুক্ত বলে গণ্য হবেন। এ বদলিজনিত কারণে বারী যোগদানের স্বাভাবিক সময়সীমা প্রাপ্য হবেন না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার কার্যভার প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথারীতি ওই বিভাগে দাখিল করবেন বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ২০০৩-এর ১৬ ধারার ব্যাখ্যা হিসেবে জানা গেছে, কোনো কর্মকর্তা অনৈতিক কাজ বা অফিসের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করলে এ ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়।
এস এম বারীর বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়। ২০১৬ সালে রংপুর অফিসের উপপরিচালক থাকাকালীন তিনি ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ঘুষ গ্রহণ, ব্যাংক থেকে বাড়ি করার জন্য ঋণ নিয়ে বাড়ি না করাসহ অনৈতিক কার্যাকালাপে জড়িত থাকায় তাকে ১৬ ধারায় রংপুর থেকে রাজশাহী অফিসে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম আব্দুল বারী বদলির বিষয়টি স্বীকার করলেও শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ ব্যাপারে অপপ্রচার করছেন আব্দুল হাই।
কেন অপপ্রচার করছেন বা কথা কাটাকাটি হলো জানতে চাইলে বারী বলেণ, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুরের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ও হলুদ দলের সাধারণ সম্পাদক। আব্দুল হাই আগে হলুদ দল করতেন। বর্তমানে নীল দল করেন। এতে করে তিনি আমার ওপর আগে থেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া আমার ব্যাংক থেকে নেওয়া হাউজ লোনের ফাইল গায়েব করে উনি পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। বুধবার আমার ফাইলের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তার গায়ে হাত তুলিনি আমি।’
এ বিষয়ে জানতে রংপুর অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে যোগযোগ করলে তিনি ঢাকা টাইমসকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বারী ও হাইয়ের মধ্যে তর্কাতর্কির সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানতে পেরেছি, তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে বারী বেয়াদবি করেছেন। তবে গায়ে হাত তোলেননি। বেয়াদবির কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে।’
দুই কর্মকর্তার অনাকাঙিক্ষত ঘটনার তদন্ত করা হবে জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, সেখানে দোষী হলে পরবর্তী সময়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।