শনিবার দুপুরের পর নয়াপল্টন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। তবে পুলিশি বাধায় তারা নয়াপল্টন থেকে বের হতে পারেনি। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন মহাসচিবসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের নয়নের মনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল বিক্ষোভ মিছিল। এতে পুলিশ বাধা দিয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে, কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দিয়েছে। সরকার মনে করেছে এভাবে দমন নিপীড়ন বাধা দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করবে। জনগণের যে প্রাণের দাবি তাকে বাধাগ্রস্ত করবে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে এভাবে দমন নিপীড়ন করে কখনও ক্ষমতায় থাকা যায় না। জনগণের ন্যায্য দাবিকে কখনো দমন নিপীড়ন করে দমন করা যায় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এটা ফেব্রুয়ারি মাস, ১৯৫২ সালে এদেশের মানুষ মায়ের ভাষার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দাবি আদায় করেছে৷’
‘এই সরকার বেআইনি, দখলদারি সরকার, জনগণের কোনো ম্যান্ডেট ছাড়া তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। একদলীয় শাসন কায়েম করতে সমস্ত দমন নিপীড়ন, নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। আজ সরকারের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই, আমাদোর ২৫ লক্ষ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তাকেও দুই বছর সাত দিন যাবত কারাগারে আটকে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, আমরা তার মুক্তির মাধ্যমে সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরা আবারও বলছি, বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তাকে মুক্তি দিন।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকের সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নেতাকর্মীদের সাহসিকতার ফলে আজকের এ সমাবেশ সফল হয়েছে।’
‘খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছেন বলেই আজ তিনি কারাগারে। আমরা বলতে চাই খালেদা জিয়াকে নয় সারা বাংলাদেশকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আজ আইনের শাসন নেই। মানুষ সুবিচার পায় না, সব জায়গায় মানুষের নিরাপত্তার অভাব।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনোবাজি করে দেশকে শেষ করে দিয়েছে। এই লুটেরা স্বৈরশাসকের শাসনে মানুষ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আজ দেশে সবকিছুতে পচন ধরেছে। এ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। জনগণকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এসব অর্জন করতে হলে সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। তার নেতৃত্বে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আনাদেরকে খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের জেলে নিক, নির্যাতন করুক গুম খুন করুক কোনো কিছুতেই প্রতিবাদ থামবে না। আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।’
‘আজ খালেদা জিয়া নয় দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও জনগণ বন্দী। তার মুক্তির মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা মুক্তি পাবে। আমরা ইনশাআল্লাহ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।’
প্রবীণ নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে খালেদা জিয়াকে জামিন দিচ্ছে না। কারণ সরকার জানে খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে রাজপথে নামলে জনগণের স্রেতে সরকার ভেসে যাবে। তাই খালেদা জিয়ার জামিন বাধাগ্রস্ত করছে। তাকে আটকে রাখছে। আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠ করবো।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মায়ের মুক্তির জন্য সমবেত হয়েছি। মায়ের মুক্তির সংগ্রাম কেউ থামাতে পারে না। কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। মায়ের মুক্তি জনগণ, গণতন্ত্র, আইনের স্বাসন ও স্বাধীনতার মুক্তি৷ মায়ের মুক্তির আন্দোলনের আমাদের যোগ দিয়ে মাকে মুক্ত করতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আন্দোলন করতে হবে, সবাইকে একত্রিত করতে হবে প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে। তাহলেই পারবো জেলের তালা ভেঙে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে।’