বান্ধব স্থানে সরিয়ে নেওয়া, গুণগত মানসম্পন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনে সহায়তা দেওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করা এবং জিডিপিতে অবদান বাড়াতে দেশে গড়ে উঠছে বিসিক প্লাস্টিক শিল্প নগরী। তবে ২০১৫ সালে নেওয়া মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শুরুতে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ঠিক করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরান ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা প্লাস্টিক শিল্প কারখানাগুলো পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিঘানে স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উদ্যোগে এটি স্থাপিত হচ্ছে। সময় এবং ব্যয় বাড়িয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ‘বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী’ সিরাজদিখানে ধলেশ্বরী সেতুর পশ্চিম পাশে বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে। শুরুতে এজন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবনায় আরও ১৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যার পুরোটাই সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়ার কথা বলা হয়। এই গড়ে ওঠা প্লাস্টিক শিল্পনগরীতে ৩৪৮টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা যাবে। এতে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক শিল্প গড়ে তোলার অভিযাত্রাকে বেগবান করবে।
কিন্তু বেশ কিছু কারণে প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ, জমির দাম বেড়ে যাওয়া। জমি অধিগ্রহণের জন্য বর্ধিত মূল্যের অর্থ সংস্থান করতেই প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পে সংশোধনী আনা হয়। এছাড়াও গণপূর্ত বিভাগের রেট সিডিউল-২০১৮ অনুযায়ী পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা, অত্যাবশ্যকীয় নতুন অঙ্গ (সুপারভিশন কনসালটেন্সি ব্যয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নববর্ষ ভাতা, বীমা চার্জ, আউটসোর্সিং সেবা ব্যয়) যুক্ত করা এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো; এসব কারণে প্রকল্পটিতে সংশোধনী আনা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৫০ একর। ৯ লাখ ২৫ হাজার ১০৩ ঘনমিটার জমির উন্নয়ন করা হয়েছে। অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে ৬ তলা ভিত্তির দুটি ফ্লোরে। শিল্পনগরীর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে ১ হাজার ৮৬৬ মিটার। এছাড়াও মেইন গেট ও অন্যান্য গেটগুলোর নিরাপত্তা দেওয়াল, পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, পানির পাইপ লাইন, রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট/বক্স কালভার্ট, বিদ্যুৎ লাইন ও ট্রান্সফরমার, সোলার প্যানেল, ডাম্পিং ইয়ার্ডসহ যাবতীয় কাজ করা হবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিসিকের অন্যতম কার্যক্রম শিল্পনগরী স্থাপন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে সহায়তা করা, দেশের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) অবকাঠামো সুবিধাসহ বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা এই পরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩৬০টি শিল্প প্লটে কমবেশি ২৫০টি প্লাস্টিক শিল্প স্থাপনসহ বেসরকারি খাতে ১৭ হাজারের অধিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ কারণেই প্রকল্পটি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রস্তাবিত শিল্পনগরীতে ৩৬০টি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন শিল্প প্লট স্থাপিত হবে, যার মধ্যে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ৩৬০টি শিল্প প্লটে কমবেশি ২৫০টি প্লাস্টিক শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে এবং এই শিল্প ইউনিটগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিসিক সূত্র জানায়, দেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ২০ ভাগ হারে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা মোকাবিলায় দেশেই এই আন্তর্জাতিক মানের প্লাস্টিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে দেশে ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১২ লাখ মানুষ। এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন এবং এই খাত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্নভাবে প্লাস্টিক পণ্য রফতানির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, তবে সরাসরি রফতানি হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি প্লাস্টিক পণ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানিয়েছেন, ‘প্লাস্টিক শিল্প একটি বিকাশমান খাত। কাঠের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশেও মানসম্মত প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণেই এই খাতের শিল্প বিকাশে সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে।’