ফুল চাষি ফজলুল কবির বলেন, ‘তামাকের কারণে পরিবেশের ক্ষতি যেমন হয় তেমনি মানুষ অসুস্থও হয়ে পড়ে। তাছাড়া তামাক চুল্লিতে বনের কাঠ পোড়ানো হয়। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ও।’
অনেক চাষি জানিয়েছেন, তামাক কোম্পানিগুলোর নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিলেও নানা কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া গ্রেডিং পদ্ধতির কারণে তামাকের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানিগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেলে তারা তামাক কেনে না। ফলে তামাক চাষের জন্য নেওয়া ঋণের ফাঁদে পড়ে গ্রামছাড়া হয়েছেন অনেক তামাক চাষি। তাই বিকল্প হিসেবে তারা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা।তামাক চাষি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে যতগুলো তামাক কেনার কথা ছিল তা নাকি শেষ হয়ে গেছে। এতে আমরা লোকসানে পড়েছি। অবিক্রিত তামাক নদীতে ফেলে দিতে হয়েছে। এছাড়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পেরে অনেকে দেশান্তরি হয়েছেন।’
গোলাপ চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তামাকের চেয়ে গোলাপ চাষ অনেক ভালো ও লাভজনক। একজনে যদি না কেনে আরেকজনের কাছে আমরা ফুল বিক্রি করতে পারি। তামাক কিন্তু আমরা বিক্রি করতে পারি না।’
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আগে অনেক তামাক চাষ করতাম। প্রায় ৪-৫ একরে তামাক চাষ করতাম, এখন কমিয়ে ফেলছি। চাষের খরচ আর আয়ে অনেক ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এখন বিকল্প হিসেবে গোলাপ চাষকেই বেছে নিয়েছি।’সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো তামাকের বিকল্প চাষে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করতে শুরু করেছে নানা কার্যক্রম ও পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে এনজিওগুলো।
এ ব্যাপারে এনজিও ইপসার প্রধান নিবার্হী আরিফুর রহমান বলেন, ‘সব তামাক চাষিকে আমরা উদ্ধুব্ধ করবো যাতে করে তারা তামাকের বিকল্প ফসলগুলো চাষ করে। এছাড়া আমাদের টার্গেট হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া।’
তবে আইন অমান্য করে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে এখনও চলছে তামাক চাষ। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে তামাক চাষিদের পরিসংখ্যান নিয়ে রয়েছে বেশ লুকোচুরি। কিছু কিছু জমিতে তামাকের বিকল্প ফসল চাষ হলেও থামছে না তামাকের আগ্রাসন। চাষিরা আটকে যাচ্ছেন তামাক কোম্পানিগুলোর বিপণন কৌশল ও নগদ প্রলোভনে।এ ব্যাপারে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, ‘কক্সবাজারের যে অঞ্চলগুলোয় বর্তমানে ফুলের চাষ হচ্ছে সেখানেই কিন্তু তামাকের জমি ছিল। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করছি তারা যেন তামাকের বদলে লাভজনক ফুল কিংবা সবজি চাষ করেন। এতে আয়ও হবে, পরিবেশও বাঁচানো যাবে।’
তিনি আরও বলেন, তামাকের চুল্লি থেকে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি চাষিরা বুঝতে শুরু করেছে। এভাবে চললে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে সম্পূর্ণরূপে তামাক চাষ নির্মূল করতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কৃষি বিভাগ।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়ার বরইলী ইউনিয়নে তামাকের পরিবর্তে চলতি বছর ৭৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গ্লাডিওলাস এবং আরও ১৬ হেক্টরসহ মোট ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করছেন পাঁচ শতাধিক চাষি।
চাষিরা জানান, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় গোলাপ প্রতি দাম মানভেদে পাইকারি তিন-চার টাকা ও গ্লাডিওলাসের স্টিক ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।