২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫৭

রহস‌্যে ঘেরা অজানা সমাধি

প্রথম দেখায় মনে হবে নবাব বাড়ি। বাইরে থেকে একরকম, ভেতরে আরেক- যেন রহস‌্যপুরী! রাত হলে তো কথাই নেই- গা ছমছম করবে। বলছি ঢাকার মোহাম্মদপুরের অজানা সমাধির কথা। সমাধি ঘিরে নবাব বাড়ির মতো ছোট্ট স্থাপনা করা হয়েছে। কালের আবর্তে সেখানে হয়তো বিত্ত-বৈভব মিলবে না, তবে গৌরবের এতটুকু কমতি নেই।

মোহাম্মদপুরের কাটাসুর থেকে বাঁশবাড়ী হয়ে শিয়া মসজিদের দিকে সরু রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার পাশেই সমাধির অবস্থান। কিন্তু কার সমাধি জানা নেই। অদূরেই ঐতিহাসিক সাত গম্বুজ মসজিদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই অজানা সমাধিকে ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছে। চারপাশে দেওয়া হয়েছে লোহার বেষ্টনী। এরপরেই দায়িত্ব শেষ! সমাধি রক্ষণাবেক্ষণের জন‌্য কেউ নেই। অযত্ন, অবহেলায় দিন দিন নষ্ট হচ্ছে স্থাপত্যশৈলী। খসে পড়ছে সিমেন্টের পলেস্তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি বাইরে থেকে দেখতে চারকোণাকৃতির হলেও ভেতরে আটকোণা। মেঝেতে কবর। শুয়ে আছেন অজানা ব্যক্তি। তবে এটি কোনো মাজার নয়। যে কারণে ভক্তের বাড়াবাড়ি নেই। সমাধির এক কোণায় স্তূপাকারে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। পড়ে রয়েছে মরা কলাগাছের একাধিক টুকরো, পশুপাখির মলমূত্র। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি শুয়ে আছেন সমাধির পাশেই। অথচ বাইরেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঝোলানো সাইনবোর্ডে সতর্কবার্তা। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে সেখানে লাকড়ির চুলায় বড় দুই পাতিলে চলছে রান্নার কাজ।

কথিত আছে, নবাব শায়েস্তা খাঁর কোনো এক মেয়ের কবর এটি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। সাইনবোর্ডে লেখা: অজানা সমাধি। সেখানে আরও লেখা রয়েছে: এই সমাধি ভবনটি খুব সম্ভবত সাত গম্বুজ মসজিদের একটি অচ্ছেদ্য স্থাপনা। স্থানীয়ভাবে পরিচালিত। সমাধির উত্তর-পূর্ব কোণে আরও দুটি কবর রয়েছে। এর মধ্যে একটি খাদেম ইউসুফ শাহ-এর। আরেকটি তার স্ত্রী সোনাভানু বেগমের।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁ বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে মোহাম্মদপুর এলাকায় মুসল্লিদের নামাজ পড়ার জন্য সাত গম্বুজ মসজিদ তৈরি করেন। এর পূর্ব দিকে বাঁশবাড়ি রোডের ধার ঘেঁষে ১৬৮০ সালে এই সমাধি গড়ে তোলা হয়। এটি মসজিদের অবিচ্ছেদ্য স্থাপনা। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেন, নবাব শায়েস্তা খাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র বুজুর্গ উদ্দিন (উমিদ) খাঁ এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তবে মসজিদ বা এই সমাধি তাদেরই নির্মাণ- এতে কোনো ভুল নেই।

স্থানীয় ও প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, এর ভেতর নবাব শায়েস্তা খাঁর মেয়ের কবর রয়েছে। তবে বংশপরম্পরায় সমাধির তদারককারী শাজাহান শাহ সাজু মনে করেন, শায়েস্তা খাঁর মেয়ে নয়; বরং সাত গম্বুজ মসজিদ নির্মাতাদের একজন ফয়জুদ্দীন শাহ সুলতানের কবর এটি। সমাধির মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, চারজন উঠতি বয়সী কিশোর ব্যাট-বল নিয়ে সমাধি প্রাঙ্গণে খেলছে। তাদেরই একজন মৃদুলের বক্তব‌্য- ‘আমরা জানি এটা ভাঙা মাজার। আমরা প্রায়ই এখানে খেলি। কেউ কিছু বলে না। তবে একজন দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। তিনি এক দিন আসেন তো দশ দিন আসেন না।’

কাঁটাসুর এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মিলন শিকদার জানান, এক সময় সমাধির পশ্চিমের ঐতিহাসিক মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। মসজিদের ঘাটে ভিড়ত বড় বড় নৌকা। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা কল্পনা করাও অসম্ভব। দালানকোঠায় ভরে উঠেছে মসজিদের চারপাশ। সমাধিটিই শুধু রহস‌্য থেকে গেল।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জানায়, সমাধি তদারককারী কর্মচারীর নাম মো. বাশার। তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কেন ধরলেন না তাও এক রহস‌্য হয়ে রইল।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০ ২:২৬ অপরাহ্ণ