জয় উপলক্ষে মিষ্টি বিতরণসহ বিভিন্নস্থানে আনন্দ মিছিল হয় তার গ্রামে। তাকে নিয়ে এখন গ্রামের সর্বত্রই আলোচনার ঝড় বইছে।
ফুলপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে রূপসী ইউনিয়নের বাশাটি গ্রামের ছেলে রকিবুল হাসান। তার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছোট্ট পুরানো বাড়ি রকিবুল ইসলামের। আজও বিদ্যুতের আলো জ্বলেনি সেখানে।
জন্মের পর থেকে রকিবুল হাসান গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি। রকিবুলের বাবা শহীদুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। তিনি পেশায় একজন গাড়ি চালক। রকিবুল পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। তবে বছরে বেশ কয়েকবার গ্রামে বেড়াতে আসতেন রকিবুল হাসান। ওই সময় গ্রামের কিশোরদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। রূপসী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেটও খেলেন।
সেই বাড়িতে কেউ না থাকায় রকিবুলের ফুফা কামাল হোসেন তার পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করেন।
রকিবুলের ফুফু রোখসানা খাতুন বলেন, ‘রকিবুল ইসলাম বেশি পড়তে চাইত না। সুযোগ পেলেই ক্রিকেট খেলতো। এ জন্য আমরা বিরক্ত থাকলেও আজ সে দেশের মুখ উজ্জল করেছে। এখন আমরা খুবই আনন্দিত।’
গ্রামের বিভিন্ন বয়সি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রকিবুল যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলছেন, এ খবর টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই জানেন গ্রামবাসী। বিশেষ করে গ্রামের কিশোরেরা এসব খবর বেশি রাখেন। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই গ্রামের মানুষ রূপসী বাজারে গিয়ে রাকিবুলের খেলা দেখেছেন।
এই এলাকার কিশোররা জানান, রাতে বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ হলেও খেলা দেখার জন্য পরিবারের অনুমতি নিয়ে রোববার রাতে রূপসী বাজারে বসেই খেলা দেখেছেন তারা। টানা উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বজায়ের শেষ রানটা আসে রকিবুলের ব্যাট থেকে। এ আনন্দের ঘোর কাটছেই না তাদের। রাতেই গ্রামের মানুষ রকিবুলের দলের জয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন। এক বছর আগে রূপসী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তারা রকিবুলের খেলা দেখেছেন।
বাশাটি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল হামিদ জানান, গ্রামে এখন বোরো ধান রোপণের ভরা মৌসুম চলছে। মানুষের দম ফেলার সময় নেই। এমন সময়েও রাকিবুলের সাফল্যের খবরে গ্রামে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমের সাংবাদিকেরা এসেছে। এটি তাদের জন্য বড় আনন্দের বিষয়।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘খেলা এত বুঝি না। তবে গ্রামে সাংবাদিক আসায় এতটুকু বুঝেছি যে, আমাদের গ্রামের ছেলে বড় কিছুই করেছে।’
গ্রামের মানুষের এ আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে চান রকিবুল হাসানের বাবা শহীদুল ইসলাম।
গ্রামের মানুষের বাঁধ ভাঙা আনন্দের খবর শুনে মুঠোফোনে বাবা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে (রকিবুল) দেশে আসলেই তাকে নিয়ে গ্রামে আসব। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে এ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবো।’