বিশ্বজয়ের পর সোমবার সকালে ভারতীয় জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আকরাম নিজের উচ্ছ্বাসা ব্যক্ত করেন। তিনি বললেন, ‘এটা অনেক বড় কৃতিত্ব। পাঁচ-ছয় বছর আগে থেকেই মনে হয়েছিল যে বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের। গত তিন-চারটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আমরা কখনও সেমিফাইনালে হেরেছি, কখনও কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছি। বাংলাদেশে ক্রিকেট মারাত্মক জনপ্রিয়। এই জয় কিন্তু আরও সাফল্যের দরজা খুলে দিল। আমার বিশ্বাস, আরও অনেক ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবে এরপর।’
কপিলের নেতৃত্বে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জেতা ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিল। পচেস্ট্রুমের জয়ও আগামী প্রজন্মকে তেমনই অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন আকরাম। পাশাপাশি, এটাও জানাতে ভুলছেন না যে, গত কয়েক বছরে কীভাবে এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তাঁর কথায়, ‘আমাদের প্রমীলা দল এর আগে এশিয়া কাপ জিতেছে। সিনিয়র দলও অনেক সাফল্য পেয়েছে।’
যদিও মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালদের ক্যারিয়ার যত বর্ণময়ই হোক না কেন, তাতে যত গৌরবজনক অধ্যায়ই থাক না কেন, বিশ্বজয়ীর তকমা নেই তাঁদের। সাকিবরা যেমন এখনও ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি, কোনও বিশ্বকাপের ফাইনালেই উঠতে পারেননি। সেখানে পারভেজ হোসেন ইমন, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, অভিষেক দাসরা ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিশ্বজয়ের গৌরবে আলোকিত।
কোথায় টেক্কা দিলেন আকবর আলীরা? আকরাম নেপথ্য কারণ হিসেবে প্রস্তুতিতে জোর দিলেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘আমাদের পরিকল্পনা খুব ভাল ছিল। প্রচুর ম্যাচ খেলেছি আমরা। দেশের বাইরেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছি। আর আমরা কিন্তু একটা দল হয়ে উঠেছি। কোনও একজনের উপর নির্ভর করে থাকেনি, বরং একজোট হয়ে খেলেছি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
রবিবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৭ তুলেছিল ভারত। যশস্বী জয়সওয়াল ছাড়া কোনও ব্যাটসম্যানই রান পাননি। শেষ সাত উইকেট পড়েছিল মাত্র ২১ রানে। তার মধ্যে আবার তিনজন রান আউট। ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে শেষ পর্যন্ত ২৩ বল বাকি থাকতে তিন উইকেটে জিতে যায় বাংলাদেশ। লেগস্পিনার রবি বিষ্ণোইয়ের চার উইকেট নেওয়া বিধ্বংসী স্পেল সামলে জিতিয়ে ফেরেন অধিনায়ক আকবর। ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে হন ম্যাচের সেরাও।
কিন্তু ম্যাচের প্রথমার্ধেই কি হেরে গিয়েছিল প্রিয়ম গর্গের ভারত? আক্রমণের বিশ্লেষণ, ‘টস জেতা খুব জরুরি ছিল। আমরা প্রথম ১০ ওভারে একেবারে রান দিইনি। ২৩ রানে এক উইকেটে থামিয়ে রাখা গিয়েছিল ইন্ডিয়াকে। আমরা শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছি। দলের কম্বিনেশনও দারুণ ছিল। দেখুন, ভারত কিন্তু অতিরিক্তই দিয়েছে ৩৩ রান। সেখানে আমরা অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং করেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই খেলেছে ছেলেরা। আমার মনে হয়েছে, বিশ্বকাপটা আমাদের প্রাপ্যই ছিল।’
গ্যালারির মতোই মাঠেও আগ্রাসী থেকেছেন আকবর আলীর দল। কিন্তু কোথাও কি অতিরিক্ত আগ্রাসন দেখিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? এমন প্রশ্নের জবাবে আকরামের জবাব, ‘দেখুন, ভারত কিন্তু ফেভারিট ছিল ফাইনালে। এই ভারতীয় দলকেই কিন্তু ফাইনালে আগাগোড়া চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। এটা মানতেই হবে। যেটা দরকার ছিল, সেটাই করেছে আকবরের দল। আর দিনটা নিশ্চিত ভাবেই ভারতের ছিল না।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে। অনেক সাফল্য, অনেক ব্যর্থতা। আনন্দ-যন্ত্রণা মিলেমিশে রয়েছে। কিন্তু, তার মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ কোথায় জায়গা করে নেবে? আকরাম বললেন, ‘অনেক জয় রয়েছে। প্রত্যেক জয়েরই আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। মহিলা দল এশিয়া কাপ জিতেছিল। আমরা বিশ্বকাপের শুরুর দিনগুলোয় পাকিস্তানকে হারিয়েছিলাম। অনেক সাফল্য আছে। কাউকে ছোট করা যায় না। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতাও আমাদের প্রাপ্য ছিল। বড় বড় যে কীর্তি রয়েছে, তার মধ্যে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়াও উপরের দিকে থাকবে।’