২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৪৭

আমদানি ব্যয় কমার পরও বাণিজ্য ঘাটতি ৬৬৮ কোটি ডলার

তিনি  বলেন, ‘অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি তারই একটি উপসর্গ। অব্যাহতভাবে রফতানি আয় কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। আমদানি ব্যয় কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে ক্যাপিটাল মেশিনারি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়। আমাদের এখন সেটিই হয়েছে।’

তিনি বলেন,  ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমে যাওয়া মানে হচ্ছে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আর বিনিয়োগ না হওয়া মানে অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানি কমেছে ১০ শতাংশের মতো। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দিন যত যাচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ততই বাড়ছে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০০ কোটি ডলার নতুন করে ঘাটতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগস্ট শেষে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৬২ কোটি ডলার। আর পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬৮ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয়ের পরিস্থিতি বেশি খারাপ। তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে পণ্য রফতানি থেকে আয় কমেছে ৭.৫১ শতাংশ। আর আমদানি ব্যয় কমেছে ৫.২৬ শতাংশ। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে গেছে।
বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও এটা নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ‘রফতানি কিছুটা কমছে, তবে রেমিটেন্স বাড়ছে। আবার আমদানি ব্যয়ও কমে এসেছে। ফলে এটা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। তবে টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় মূল্য যদি একটু কমানো হয়, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে মোট ২ হাজার ২২০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৫৫২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছিল এক হাজার ৬৭৮ কোটি ডলার। আমদানি খাতে ব্যয় হয়েছিল দুই হাজার ৩৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।
সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও সেবাখাতের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৪৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবাখাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু হলেও গত সেপ্টেম্বর থেকে ঘাটতি দেখা দেয়।
নিয়মিত আমদানি-রফতনিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকলে ধরে নিতে হয়, নিয়মিত লেনদেনে সরকারকে কোনও ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে ধরে নিতে হয়, সরকার ঋণ নিয়ে তা পূরণ করছে।
চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দিলেও আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এছাড়া প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগেও (এফডিআই) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এফডিআই এসেছে ২১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এফডিআই আসে ২১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই হিসাবেই পাঁচ মাসে এফডিআই বেড়েছে ৪.৪২ শতাংশ। এই পাঁচ মাসে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ১১২ কোটি ডলার। আগের বছরে একই মাসে এসেছিল ১০৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

প্রকাশ :জানুয়ারি ১১, ২০২০ ২:১৮ অপরাহ্ণ