রবিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিতর্কিত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএম ব্যবহার নিশ্চয়ই ভোটারদের জন্য সহজ ও বোধগম্য কোনও পদ্ধতি নয়। আমাদের সহজ-সরল ভোটাররা ইভিএমের মতো জটিল প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত নয় এবং সেভাবে যথাযথ প্রশিক্ষণও পায়নি। এক কথায় ইভিএম ভোটারবান্ধব কোনও পদ্ধতি নয়। সেই তুলনায় প্রচলিত কাগজের ব্যালট ব্যবহারেই তারা অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কাগজের ব্যালটে তারা তাদের ইচ্ছেমতো মার্কায় সিল মেরে সন্তুষ্ট হতে পারেন। যাকে ভোট দিতে চান তাকেই মূল্যবান ভোটটি দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ইভিএমে ভোটার অডিট ট্রেইল না থাকায় বুঝতেই পারবেন না তিনি যাকে ভোট দিতে চেয়েছেন ভোটটি তিনিই পেলেন কিনা। আর এখানেই যত শুভঙ্করের ফাঁকি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ এবং সহজতর কর্মকৌশল ও পরিবেশে ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ। মূলত জনগণের অধিকার নিশ্চিতের এই গুরুদায়িত্ব যথাযথ পালনেই নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জনগণ যাতে কমিশনের যেকোনও সিদ্ধান্তকে তাদের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু, আমরা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বর্তমান দলবাজ নির্বাচন কমিশনের প্রতি এ দেশের মানুষের ন্যূনতম আস্থা নেই। জনগণ ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)’ পদ্ধতিতে তার ভোট প্রয়োগ করবে, একতরফা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনও নৈতিক অধিকার বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেই।
প্রসঙ্গত, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বিএনপির আপত্তি শুরু থেকেই। ২০১৭ সালের ২২ মে ইভিএম’র বিরোধিতা করে ইসিকে একটি চিঠি দেয় দলটি। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে ইভিএম পরিত্যাগ করছে, সেখানে বাংলাদেশে তা চালু করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে, এখানে ডিজিটাল কারচুপির শঙ্কা রয়েছে।’ ইভিএম চলবে না বলে মন্তব্য করে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর দলের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের সমাবেশে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ইভিএমে ভোট নেওয়া বন্ধ করার দাবি করেছিলেন। এছাড়াও গত ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেছেন, ‘ইভিএমে নির্বাচনের ফল পাল্টানো ও কারচুপির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।