দেশের বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে এখনও সেই অবস্থা তৈরি হয়নি। গ্যাসের চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি এখনও আছেই। তাই দেশীয় গ্যাসের পাশাপাশি বিদেশ থেকে বেশি দাম দিয়ে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ১১টি পুরানো কূপ আবার নতুন করে খনন করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
বাপেক্স সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে মোট ৩৪টি কূপ ড্রাই এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এছাড়া সাসপেন্ডেন্ট (নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে) আছে আরও ১৮টি কূপ। এরমধ্যে ১১টি কূপ আবার যাচাই বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এই ১১টি কূপের মধ্যে আছে কসবা -১, মোবারকপুর- ১, শ্রিকাইল -১, রূপগঞ্জ -১, সুন্দলপুর ১, সালদানদী- ১, সালদানদী -২, মুলাদি ১, মুলাদি-২, সেমুতাং, ১ এবং হালদা-২ ।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমরা গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে যেমন বাইরে থেকে গ্যাস আমদানি করছি তেমনি দেশের মধ্যে পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর কূপ থেকে এখনও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেগুলো রিভিজিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের মধ্যে এখন এমন কূপ আছে যেখানে গ্যাস আছে কিন্তু প্রযুক্তির সমস্যার কারণে আমরা উত্তোলন করতে পারছি না। কিন্তু উন্নত বিশ্ব এমন সব জায়গা থেকে গ্যাস তুলছে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে বাপেক্স অন্য কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে সেসব জায়গায় কাজ করতে পারে এবং যদি গ্যাস উত্তোলন করতে পারে তাহলে আমরা লাভবান হবো।
জানা যায়, কূপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো কূপ আছে মুলাদিতে। ১৯৭৬ সালে মুলাদী-১ কূপটিতে ৪ হাজার ৭৩২ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। একইভাবে ১৯৮১ সালে মুলাদি-২ কূপটি খনন করা হয়। কূপটির ৪ হাজার ৫৫৬ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। একইভাবে ১৯৯৬ সালে সালদানদী-১ কূপে ২ হাজার ৮৩৯ মিটার , ১৯৯৮ সালে হালদা-১ এ ৪ হাজার ৫১৯ মিটার, ১৯৯৯ সালে সালদানদী-২ কূপে ২ হাজার ৪৫৮ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। ২০০৪ সালে শ্রীকাইল-১ কূপটির ৩ হাজার ৫৮৩ মিটার পর্যন্ত, ২০১১ সালে সুন্দলপুর-১ এর ৩ হাজার ৩২৭ মিটার পর্যন্ত, ২০১৪ সালে রূপগঞ্জ-১ এর ৩ হাজার ৬১৫ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। অন্যদিকে, ২০১৬ সালে মোবারকপুর-১ কূপটিতে ৪ হাজার ৬২৪ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। একইভাবে ২০১৮ সালে সেমুতাং-১ কূপে ৩ হাজার ২০ মিটার এবং একই বছর কসবা-১ এর কূপটিতে ২ হাজার ৫৫৭ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়।
কূপগুলোর অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে বাপেক্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কসবার কূপটি খননের পর গ্যাস পাওয়া যায়। তবে সেটি থেকে মাত্র ৩ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস ওঠে, এরপর আর ওঠেনি। ফলে এটি পাইপ লাইন করে গ্রিডে দেওয়া বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নেয় বাপেক্স। তবে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, কূপের ভেতরে যে কাঠামো থেকে গ্যাস তোলা হয় সেখানে সাধারণত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্রের একটা থেকে অন্যটির দূরত্ব বেশি এবং যুক্ত নয়। এই অবস্থাকে টাইট স্যান্ড (অপেক্ষাকৃত শক্ত ভূ-কাঠামো) বলে। উন্নত বিশ্বের অনেক কোম্পানি এমন কাঠামো থেকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে। কিন্তু, বাপেক্সের কাছে এই ধরনের কোনও প্রযুক্তি নেই। তাই কূপটি রিভিউ করে অন্য কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বাপেক্সের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, একইভাবে সুন্দলপুরেরও টাইট স্যান্ড, মোবাররকপুরের কূপের মুখে আগুন দিয়ে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রেসার (চাপ) কম থাকায় কূপ থেকে গ্যাস তোলা বন্ধ রাখা হয়। শ্রীকাইলেও টাইট স্যান্ড আবার কূপ খননের সময় পানি উঠে আসায় গ্যাস উত্তোলনে যেতে পারেনি বাপেক্স। রূপগঞ্জে প্রথমদিকে গ্যাস উঠলেও পরে প্রেসার কমে যায়। এখনও সেখানে গ্যাস আছে। টাইট স্যান্ড থাকার কারণে আমরা কাজ করতে পারছি না। সেমুতাং এ অনেকগুলো কম্পার্টমেন্ট আছে। একটি কম্পার্টমেন্ট থেকে গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। অন্য কম্পার্টমেন্টগুলো জটিল। তাই আমরা আর গ্যাস তুলতে পারিনি। বাপেক্সের সেই অভিজ্ঞতা নেই। মুলাদির দুইটি কূপ অনেক আগের। প্রথমদিকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তোলা যায়নি। এগুলোতে এখন যৌথ ব্যবস্থায় পুনর্খননের পরিকল্পনা করছে বাপেক্স।