২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৩৯

যেখানে আঘাত হানতে পারে ইরান

বিদেশ ডেস্ক  : ইরানের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দেশটির প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর বৈশ্বিক তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাকে হত্যার পরপরই কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে তেহরান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তেলের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। এরই মধ্যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রতিশোধের অংশ হিসেবে হরমুজ প্রণালিতে ওয়াশিংটনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে ইরান। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন এক রকেট হামলায় নিহত হন ইরানের বিশেষ বাহিনী রেভ্যুলশনারি গার্ডের কুদস শাখার প্রধান জেনারেল ও আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধির প্রধান কারিগর কাসেম সোলায়মানি। তিনি ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর সবচেয়ে প্রভাবশালী কমান্ডার। সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরান প্রতিশোধের হুমকি দেওয়ায় হামলা সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালি। এই ব্যস্ততম সমুদ্রপথে হামলা হলে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তেল সরবরাহ ও বিশ্ব বাজারে।

ইরান ও ওমানে মধ্য দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার সরু পথ হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বের সামুদ্রিক তেল বাণিজ্যের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রতিদিন এই পথ দিয়ে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি করা হয়। এছাড়া পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের যেকোনও ধরনের সামুদ্রিক যোগাযোগের জন্য পথটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। পথটির ওপর ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন ও কাতারের সব বন্দর, আরব আমিরাতের বেশিরভাগ বন্দরসহ সৌদি আরবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

বাস্তবসম্মত হোক আর না হোক হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া হলে অবশ্যই তা বিশ্ববাজারে প্রভাব ফেলবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শীর্ষ তেল আমদানিকারক দেশগুলো এই পথের ওপরই বেশি নির্ভর করে থাকে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার দেশগুলো। কারণ এই পথ দিয়ে সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর। এশিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ তেলের যোগান দেয় এই নৌপথ। তাই পথটি বন্ধ করা হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাবে। ফলে এসব দেশ আরও ভোগান্তিতে পড়বে।

গত বছর ওই ওমান উপসাগরের কাছে দুই জাহাজে হামলা হয়। এর একটি তেলবাহী আর অন্যটি ক্যামিকেলবাহী জাহাজ। এর ফলে ওই সময় তেলের দাম বৃদ্ধি পায়। ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরানের শীর্ষ জেনারেলকে হত্যার জবাবে পারস্য উপসাগরে তেলবাহী জাহাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘ইরান বাণিজ্যিক জাহাজে হয়রানি পুনরায় শুরু করতে পারে। জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে অস্থায়ীভাবে সামারিক তৎপরতা শুরু করতে পারে।’

চলমান হুমকির কারণে যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিশ্বের অর্থনীতিতে ব্যাপক সংকট দেখা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন বলছে, ওমান ও পারস্য উপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত হরমুজ প্রণালি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু। এই প্রণালির নিরাপদ সরবরাহ ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতি চলতে পারে না।

জ্বালানি তেল বিশ্লেষণ সংস্থা ভরটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালি দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবহন হয়। এই ভৌগোলিক পরিসীমায় ইরানি নৌবাহিনীর প্রবল দাপট রয়েছে। এখন বিশাল উপকূলীয় সুবিধার কারণে হরমুজ প্রণালি দিয়ে তেলবাহী জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হলে ধাক্কা খাবে বিশ্ব অর্থনীতি। এর জেরে বিশ্ব তেল বাজারে সংকট দেখা দেবে।

প্রকাশ :জানুয়ারি ৪, ২০২০ ১২:২৩ অপরাহ্ণ