মেয়র পদে বিএনপির একাধিক আগ্রহী প্রার্থী থাকলেও দক্ষিণে সাদেক হোসেন খোকার পুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ও উত্তরে তাবিথ আউয়াল সক্রিয়ভাবে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি বাবা হারানোর কারণে কিছুটা শোকের মধ্যে আছেন ইশরাক। তবে নিয়মিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে ছুটছেন গত নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুপুত্র তাবিথ।
৩০ ডিসেম্বরের ভোটের পর নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বর্তমান কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। যদিও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে দলটি। এরই মধ্যে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার আভাসও মিলেছে দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে। এখনো চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা দেয়নি দলটি।
বিএনপি থেকে কাদের প্রার্থী করা হচ্ছে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত পাকাপাকি করেননি দলটির নীতিনির্ধারকরা। তবে ইভিএমের ব্যাপারে আগে থেকেই আপত্তি জানানো বিএনপিতে এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ দুই সিটিতে পুরোপুরি ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির সিনিয়র নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনে করছেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আপত্তি না থাকলেও বর্তমান ইভিএম ব্যবস্থা নিয়ে তাদের আপত্তি আছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতে, ডিসেম্বরের শেষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির তফসিল ঘোষণা করা হবে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মধ্যেই ভোট গ্রহণ হবে। এ নির্বাচনে বিদ্যমান ভোটার তালিকাই ব্যবহার করা হবে। দুই সিটিতেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৫৩ তম সভার কার্যবিবরণীতে এসব সিদ্ধান্ত উঠে এসেছে। তবে কমিশনের ওই সভায় ভোটের সময়সূচি ঠিক করা হয়নি।
২০১৫ সালে ঢাকা সিটির নির্বাচনে উত্তরে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। আনিসুল হকের সঙ্গে নির্বাচনে লড়ে তিনি পেয়েছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট। আর দক্ষিণে ইশরাক আগ্রহী থাকলেও বিএনপি মনোনয়ন দেয় মির্জা আব্বাসকে। তবে মামলার কারণে প্রকাশ্যে আসেননি আব্বাস। তাই নির্বাচনী মাঠ গরম রাখেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে মির্জা আব্বাসের নির্বাচন করার সম্ভাবনা কম। তবে আফরোজা আব্বাসকে মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে আছে দলের একটি অংশ। তাদের মতে, বিগত নির্বাচনে আব্বাসকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তার অুনপস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন আফরোজা। তবে আব্বাস দম্পতি ছাড়া দক্ষিণে মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খোকাপুত্র ইশরাক। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে ইশরাকের মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন, গত নির্বাচনে তাবিথ ভোটের দিন মাঝপথে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পরও প্রচুর ভোট পেয়েছেন। মেয়র হতে না পারলেও দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। তরুণ হিসেবে এই প্রজন্মের ভোটারদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও আছে।
অন্যদিকে ইশরাকও তরুণ প্রকৌশলী। খোকা সাবেক মেয়র ছিলেন। পুরান ঢাকায় তার ব্যক্তিগত এবং দলীয় ভোটব্যাংকও রয়েছে। এ ছাড়া তিনি মারা যাওয়ার পর সন্তান হিসেবে আলাদা সহানুভূতি থাকবে ইশরাকের প্রতি। এ কারণে দক্ষিণে ইশরাকই এগিয়ে আছেন।
এসব কারণে দলের হাইকমান্ড থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত নিয়ে মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছেন এই দুই তরুণ রাজনীতিক। চূড়ান্ত ঘোষণা এলে ঢাকা সিটিকে সাজাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ‘অদম্য ঢাকা’র ব্যানারে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছেন তাবিথ আউয়াল। নাগরিক জীবনের নানা সমস্যা এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ তুলে ধরছেন এসব অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে রুটিন করে মতবিনিময় সভাও করছেন তাবিথ।
ঢাকা টাইমসকে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। নেতাকর্মী-সাধারণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছি। তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সুযোগ পেলে ঢাকা উত্তরের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’
দল থেকে ইঙ্গিত পাওয়ার কথা জানিয়ে আরেক প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, প্রস্তুতি নিচ্ছি। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে যাচ্ছি। আশা করি দল থেকে পজিটিভ সিদ্ধান্ত আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটের ওপর বিএনপির আস্থা না থাকলেও আমরা অংশ নেয়ার ব্যাপারে পজিটিভ। সম্ভাব্য দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সময়মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’