২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:০৬

প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন’ কার স্বার্থে?

প্রস্তাবিত আইনটি এবছরের জুনে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে পাঠানো হয়। সেখানে বেশকিছু সংযোজন-বিয়োজন শেষে খসড়াটি ফেরত আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। চিকিৎসক নেতারা বলছেন, হয়তো শিগগিরই খসড়াটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রস্তাবিত সাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যেগুলো বিভ্রান্তিকর ও অসম্পূর্ণ। এসব ধারা পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করবে। আর এতে করে রোগীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রস্তাবিত আইনটি তাদের কাছে বাস্তবসম্মত নয় বলেও দাবি করেন তারা।

চিকিৎসকদের অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস। সংগঠনটির উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন ২০১৮’-এর খসড়া পেয়েছি, যা শিগগিরই মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে বলে শুনছি।’’

প্রস্তাবিত আইনে বলা আছে—‘যদি কোনও বেসরকারি হাসপাতালে কোনও অন্যায় হয়, তাহলে সেই হাসপাতালের প্রধান বা মালিক এর জন্য দায়ী হবেন।’ কিন্তু সরকারি হাসপাতালে যদি এমন কিছু হয়, সেজন্য কে দায়ী হবেন, প্রশ্ন করে ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘এই বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনের ১১ ধারায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশনা থাকলেও ল্যাবরেটরির সেসব রিপোর্টে চিকিৎসকের স্বাক্ষর থাকার কথা, তা উল্লেখ করা হয়নি। এখানে রোগীর স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। অথচ এরকম নির্দেশনা না থাকার কারণে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের স্বাক্ষর দেওয়া রিপোর্টের কারণে রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের জরিমানাসহ নানা ধরনের শাস্তি দিয়েছেন।’

প্রস্তাবিত নতুন আইনের খসড়া নিয়ে তাদের ভূমিকা কী জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক  বলেন, ‘প্রস্তাবিত যে আইন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর কিছু ধারা বাস্তবসম্মত নয়। এগুলোর সঙ্গে আমাদের আপত্তি ও দ্বিমত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয় যখন ডাকবে, তখন সেগুলো আমরা তুলে ধরবো। আমরা এ বিষয়ে হোমওয়ার্ক করেছি, প্রস্তুত আছি। আমাদের ছাড়া মন্ত্রণালয় এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তারপরও সেটা যদি মন্ত্রণালয় করে, তাহলে আমরা এটা ‘ওউন’ করবো না।’’

আর কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে তারা ফাইনাল খসড়াটি ব্যাক করেছে জানিয়ে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কিন্তু অবজারভেশন মেন্ডেটরি না, অবজারভেশন ইজ নট ল। আমরা যদি এগুলো না মানি, তাহলে আবারও আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো, কিংবা তাদের অবজারভেশন কেন যৌক্তিক নয়, সেটাও বলবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘আমরা যে খসড়া সবাই মিলে করেছিলাম, সেটি কীভাবে কেবিনেটে পাঠিয়েছে, তা আমরা জানি না। কারণ, এর আগে আমাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ করা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের দেখায়নি।’

ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে যেমন রোগীদের সুরক্ষা, অধিকার বাস্তবায়নের বিষয়টি থাকতে হবে, তেমনি চিকিৎসকদের মর্যাদার সঙ্গে কাজ করার সুযোগও রাখতে হবে। কিন্তু যে খসড়া করা হয়েছে, তাতে চিকিৎসকদের মর্যাদার বিষয়টি যেমন ক্ষুণ্ন হয়েছে, তেমনি রোগীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোগীদের নিরাপত্তা চাই, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা চাই। একইসঙ্গে আমাদের যে অধিকার, সেটাও প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমে ‘রোগী সুরক্ষা আইন ২০১৪’ এবং ‘স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন ২০১৪’ নামে দুটি খসড়া তৈরি করা হয়। ওই সময়ে এ সংক্রান্ত সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করার পর বিভিন্ন অভিমতের ভিত্তিতে পৃথক দুই আইনের পরিবর্তে বিষয় দুটিকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, এর মাধ্যমে যেন রোগী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত পেশাজীবী ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ এটা আমরা জানতাম না। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভেরি কনভেনিয়াল। সুতরাং চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে উভয়ের সমপরিমাণ দাবি ও প্রত্যাশা থাকে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে সবার সেবা ও নিরাপত্তা সুরক্ষার বিষয়টি সংযুক্ত করা আছে। সবাইকে নিয়ে একাধিকবার বসেই এই জায়গাটি দাঁড় করিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম, সেখানে যাচাই-বাছাই কমিটি কিছু সুপারিশ করে পাঠিয়েছে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আগামী ২৬ নভেম্বর আমরা এ সংক্রান্ত সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের অনুরোধ করা হয়েছে আসার জন্য। সেখানে স্বাচিপ, বিএমএসহ সংশ্লিষ্ট সবাই থাকবেন। আমরা ওই বৈঠকে সবাইকে নিয়েই আলোচনায় বসবো।’ সবার জন্য যেন সেটি মঙ্গলজনক হয়, সেই বিষয়গুলো যোগ করা হবে বলেও তিনি জানান।

প্রকাশ :নভেম্বর ২৫, ২০১৯ ১২:০৩ অপরাহ্ণ